
নির্জন, নিস্তব্ধ সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পাদদেশে শুক্রবার ভোরে শেরপুর রানার্স কমিউনিটির উদ্যোগে আয়োজন করা হয় 'শেরপুর হাফ ম্যারাথন-২০২৫'। সেগুন, মেহগনি, জারুল ও গজারি গাছের সারির মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা কালো পিচঢালা সড়কে অনুষ্ঠিত এই দৌড়ে অংশ নেয় সব বয়সী দৌড়প্রেমী আবাল, বৃদ্ধ-বনিতা সবাই।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া-কামালপুর সড়কে ‘শেরপুর হাফ ম্যারাথন-২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় শীতের কুয়াশা ভেদ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় ৮০০ নারী-পুরুষ রানার রাংটিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জড়ো হন। সেখান থেকেই শুরু হয় ‘হাফ ম্যারাথন’। পরে ওই সড়কে ১০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরের তাওয়াকুচা এলাকা থেকে ইউ–টার্ন নিয়ে পুনরায় বিদ্যালয় মাঠে এসে ২১ কিলোমিটারের হাফ ম্যারাথন শেষ হয়।
৫ কিলোমিটার ম্যারাথনে অংশ নেন জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. মাহমুদুল হক রুবেল, শেরপুর সদর-১ আসনের ধানের শীষ প্রতীক– মনোনীত প্রার্থী ডা. সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা। শেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব হযরত আলী। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবু রায়হান রুপন প্রমুখ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল- শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক কলামিষ্ট্ কাকন রেজা-কার্যকরী সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক রফিক মজিদ-মাসুদ হাসান বাদল - রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে ক্রীড়াবিদ, তরুণ-তরুণী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ সবাই অংশগ্রহণ করেন এক মিলনমেলায়।
এ ছাড়া ১, ৫ ও ১০ কিলোমিটারের ম্যারাথনে অংশ নেন শিশু, বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া বেদে পল্লী, হরিজন পল্লী ও তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকরা। উৎসুক দর্শনার্থীরাও পাহাড়ি পথে অবস্থান নেন প্রতিযোগীদের উৎসাহ দিতে।
ইভেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ম্যারাথন সমন্বয়ক রাজিয়া সামাদ ডালিয়া ও আয়োজক কমিটির প্রতিনিধিরা। অংশগ্রহণকারী ও দর্শনার্থীদের মতে, প্রকৃতি ও খেলাধুলার অপূর্ব সমন্বয়ে গারো পাহাড়ে এই ম্যারাথন হয়ে উঠেছে এক স্মরণীয় আয়োজন।
২১ কিলোমিটার হাফ ম্যারাথনের অংশগ্রহণকারী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গারো পাহাড়ের পাদদেশ ঘেঁষে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি ঢাল ও উঁচুনিচু পথ অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ালেও মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি সেই ক্লান্তি ভুলিয়ে দিয়েছে।
শেরপুর রানার্স কমিউনিটির প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী আল–আমিন সেলিম বলেন, জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরা, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং গারো পাহাড় ও প্রাণী রক্ষা এ উদ্দেশ্যেই ‘শেরপুর রানার্স কমিউনিটি’ তৃতীয়বারের মতো এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
তিনি আরও বলেন, যুবসমাজ দিন দিন মাদকের দিকে ঝুঁকছে। তাদের খেলাধুলার মাধ্যমে সুস্থ পথে ফেরানোটাই আমাদের লক্ষ্য। ম্যারাথনে নিরাপত্তা ও চিকিৎসাসেবার জন্য ছিল পর্যাপ্ত ব্যবস্থা; পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের সার্বিক সহযোগিতাও ছিল প্রশংসনীয়। ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকবে।