রাজধানী ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ মাঠের নিকটে দুটি নীল রঙের ড্রামের ভেতর থেকে কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের ২৬ খণ্ড মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালেই পথচারীরা ড্রাম দুটি পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।
পরিচয় শনাক্তের পর জানা যায়, নিহত আশরাফুল হক রংপুরের বদরগঞ্জের বাসিন্দা। তিনি কাঁচামাল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করতেন। এ ঘটনায় তার বন্ধু জরেজুল ইসলাম এবং এক নারী শামীমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে একটি ত্রিভুজ সম্পর্ককে কেন্দ্র করে সংঘটিত ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের তথ্য।
ডিবি পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আশরাফুল ও জরেজুল দীর্ঘদিনের বন্ধু ছিলেন। মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজুলের মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয় কুমিল্লার বাসিন্দা শামীমা আক্তারের সঙ্গে। পরবর্তীতে শামীমার সঙ্গে দুজনেরই অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হলে বন্ধুত্বে দেখা দেয় টানাপোড়েন।
তদন্তে জানা গেছে, এই সম্পর্কের জেরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত তা ভয়াবহ ঘটনার দিকে ধাবিত হয়।
ডিবি জানায়, দক্ষিণ ধনিয়ায় ভাড়া করা বাসায় ঘটনার দিন তিনজনই অবস্থান করছিলেন। রাতে আশরাফুল ঘুমিয়ে পড়লে প্রথমে তাকে বালিশ চাপা দিয়ে ধরেন জরেজুল। এরপর মাথায় হাতুড়ির আঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।
মৃত্যুর পর মরদেহ দুইদিন একই বাসায় রাখা হয়। পরে দুই আসামি মিলে মরদেহ ২৬ অংশে বিভক্ত করে দুটি ড্রামে ভরে জাতীয় ঈদগাহ এলাকায় ফেলে যায়। হত্যার পর তারা কুমিল্লায় পালিয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা থেকে জরেজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। একই রাতে র্যাব-৩ লাকসাম থেকে শামীমা আক্তারকেও গ্রেপ্তার করে।
শামীমা আক্তারের স্বামী দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে রয়েছেন, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ফেসবুক-মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তার জরেজুলের সঙ্গে পরিচয় ও পরবর্তীতে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ জানায়, মরদেহ ২৬ টুকরায় বিভক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, চুল ও মুখের অংশ স্বাভাবিক থাকলেও শরীরের কিছু অংশের মিল পাওয়া যায়নি, ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নিহত আশরাফুলের বোন আনজিনা বেগম শাহবাগ থানায় মামলা করেন। এজাহারে তিনি জানান, তার ভাই ১১ নভেম্বর রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ১৩ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ড্রামে মরদেহ উদ্ধারের সংবাদ দেখে পরিবার শনাক্ত করতে যায়।
তাদের অভিযোগ, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জরেজুল ও তার সহযোগীরা আশরাফুলকে হত্যা করেছে।
নিহতের স্ত্রী লাকী বেগম জানান, জরেজুল বিদেশ যাওয়ার জন্য তার স্বামীর কাছে ১০ লাখ টাকা ধার চেয়েছিলেন এবং তারপর থেকেই সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, ত্রিভুজ সম্পর্কের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অল্প সময়ের মধ্যেই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং আইনগত প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে।