‘অদৃশ্য শক্তির’ প্রভাব ঠেকাতে ইসিকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দলগুলোর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ৫:৫৪ PM
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও রাজনৈতিক প্রভাবসহ যেকোনো ‘অদৃশ্য শক্তির’ প্রভাবমুক্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছে সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো। তারা বলেছে, অতীতের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে হলে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) শুরু থেকেই শক্ত অবস্থান নিতে হবে, হতে হবে নিরপেক্ষ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রোববার (১৬ নভেম্বর) দ্বিতীয় দিনের সংলাপে অংশ নেয় ২৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এসব সংলাপে দলগুলো তাদের অভিজ্ঞতা, উদ্বেগ ও বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরে।
গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, অতীতে ইসির ওপর জাতির আস্থা থাকলেও নিরপেক্ষতার ঘাটতি দেখা গেছে। তিনি অভিযোগ করেন, তখন ‘অদৃশ্য শক্তির’ প্রভাব নির্বাচনের পরিবেশকে কলুষিত করেছিল। এবার এমন কিছু যাতে না ঘটে, সেজন্য ইসিকে সতর্ক ও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘গণভোটের ক্ষেত্রেও যেন কোনো ধরনের প্রহসন না ঘটে, সে বিষয়ে ইসিকেই সোচ্চার থাকতে হবে।’
গণফ্রন্টের মহাসচিব আহমদ আলী শেখ বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী অনেক সময় নির্বাচন কমিশনই অবিচারের শিকার হয়েছে। তিনি মনে করিয়ে দেন, এই পরিস্থিতিতে কমিশনের ওপর দায়িত্ব আরও বেশি।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ এন এম সিরাজুল ইসলাম সুপারিশ করেন—জেলা বা অঞ্চলভিত্তিক ধাপে ধাপে ভোট আয়োজন, জামানত কমানো এবং ভোটকেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি স্থাপন করা।
একইভাবে ১৪-দলীয় জোটের বাইরে থাকা কয়েকটি ক্ষুদ্র দলের প্রতিনিধিরাও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, অপতথ্য রোধ এবং কালো টাকার প্রভাব প্রতিরোধে ইসির কঠোর ভূমিকার ওপর জোর দেন।
আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দ্বিতীয় দিনের সংলাপ।
সংলাপের শুরুতেই ইসলামী ঐক্যজোটের দুই পক্ষ একসঙ্গে উপস্থিত হওয়ায় কিছুক্ষণ হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। ইসি সচিব তাদের মধ্যে যাদের নামে আমন্ত্রণপত্র নেই তাদের বের হয়ে যেতে বলেন। পরে একাংশের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজী জানান, দল পুনর্গঠনের মাধ্যমে তারা সংলাপে অংশ নিচ্ছেন।
সংলাপে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, ‘যারা পেশীশক্তি দেখাবে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ তিনি আরও বলেন, অতীতে কেন্দ্র দখল, সিল মারা এবং ভীতিপ্রদর্শনের মতো অপকর্ম রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে নষ্ট করেছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, দলগুলো সহযোগিতা করলে খুব সামান্য প্রস্তুতি দিয়েও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
১৮ নভেম্বর ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ উদ্বোধনের বিষয়ও তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রবাসী ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। অ্যাপ ব্যবহারে গোপনীয়তা বজায় না রাখলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি সতর্ক করেন।
মিসইনফরমেশন রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, ‘ব্যান্ডউইথ বন্ধ করে, ওয়েবসাইট সীমিত করে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়াতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘আমরা কারও কাছে নতজানু হবো না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা প্রয়োজন সব করছি।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন জানান, নির্বাচনকে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য করতে দলগুলোর যৌথ সহযোগিতা অপরিহার্য। তিনি বলেন, কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে সেখানে শুধু ‘না’ ভোট গ্রহণ করা হবে। হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
সংলাপ শেষে দলগুলো আশা প্রকাশ করে, ইসি নিরপেক্ষতা বজায় রাখলে এবার নির্বাচন নিয়ে জনগণের আস্থা ফিরবে এবং ‘অদৃশ্য শক্তির’ প্রভাবমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হবে।