দেশে পুলিশের নতুন পোশাক চালু হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ মনে করছেন, আগের ইউনিফর্মই যথেষ্ট ছিল এবং নতুন পোশাকে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হয়েছে। আবার অনেকে নতুন ডিজাইনকে আধুনিক ও আকর্ষণীয় বলে মত দিয়েছেন। এমনকি পুলিশ সদস্যদের মধ্যেও নতুন পোশাক নিয়ে বিভক্ত মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে।
জুলাই আন্দোলনের সময় বিতর্কিত ভূমিকার কারণে সমালোচিত পুলিশ বাহিনী নতুন ইউনিফর্মের মাধ্যমে নিজেদের ভাবমূর্তি বদলানোর চেষ্টা করছে এমন মন্তব্যও করেছেন অনেকেই। শনিবার থেকে দেশের আটটি মহানগর এবং বিভিন্ন বিশেষায়িত ইউনিটের সদস্যরা প্রাপ্যতার ভিত্তিতে লৌহ রঙের নতুন পোশাক পরে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ইতোমধ্যে সব মেট্রোপলিটন ইউনিটকে নতুন পোশাক সরবরাহ করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সারাদেশের সদস্যরাও তা পাবেন।
তবে পুলিশের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু পোশাক বদল করে পুলিশের মনোভাব বা আচরণ বদলানো সম্ভব নয়। তাদের মতে, একটি জনবান্ধব ও পেশাদার পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে হলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং বেআইনি আদেশের ক্ষেত্রে পুলিশকে ‘না’ বলতে শেখাতে হবে।
সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ইউনিফর্ম বদল করে কী ফল আশা করা হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। ইউনিফর্মের সঙ্গে পারফরম্যান্সের কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। তিনি আরও জানান, শত বছরের পুরোনো অভিযোগ এখনো পুলিশের বিরুদ্ধে বিদ্যমান। অতীতে দুই-তিনবার ইউনিফর্ম পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু আচরণে কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যায়নি। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, শ্রীলঙ্কা এখনো ব্রিটিশ আমলের খাকি রঙের পোশাক ব্যবহার করছে, তবুও তাদের বাহিনীর চরিত্র পোশাক বদলে ঠিক হয়নি।
রাজধানীর মহাখালী এলাকায় নতুন পোশাক পরে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য জানান, অনেক আবাসিক এলাকার সিকিউরিটি গার্ডরাও একই রঙের পোশাক পরেন। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। তিনি বলেন, আগেরবার পোশাক পরিবর্তনের সময় জাতীয় পর্যায়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছিল, কিন্তু এবার কোনো ঘোষণা বা প্রচারণা ছাড়াই হঠাৎ করে নতুন পোশাক দেওয়া হয়েছে।
আরেক পুলিশ সদস্য জানান, সরকারি চাকরি করছি, সুতরাং সরকার যেমন নির্দেশ দেবে, তেমনই চলতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে কিছু বলার নেই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত নতুন পোশাক সরবরাহের কাজ ২০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ডিএমপির প্রায় ৩৪ হাজার সদস্যই নতুন পোশাক পেয়ে যাবেন।
মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক ও অপরাধ বিশ্লেষক মুহাম্মদ আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, অতীতেও পোশাক বদল হয়েছে অথচ চরিত্র বদলায়নি। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। পুলিশ সংস্কার যদি বাস্তবায়নের পথে এগোয়, তাহলে নতুন পোশাক পরিবর্তন আংশিক হলেও কাজে দিতে পারে।