
জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা
সারাদেশে ‘মানবিক ডিসি’ হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা চট্টগ্রামের ৩৪তম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আজ মঙ্গলবার তিনি ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামানের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেন।
দায়িত্ব গ্রহণের প্রাক্কালে জাহিদুল ইসলাম জনবান্ধব, স্বচ্ছ ও মানবিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সুশাসন নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সকল স্তরে পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি এবং নাগরিক সেবায় দ্রুততা ও দক্ষতা নিশ্চিত করাই হবে তার মূল লক্ষ্য।
রাজবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব পালনকালে জাহিদুল ইসলাম দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, ঝুঁকিপূর্ণ রোগী, দুস্থ মানুষ, শিশু কিংবা কারাবন্দি—সবার জন্য তিনি হয়ে উঠেছিলেন নির্ভরতার প্রতীক। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, হুইলচেয়ার, চিকিৎসা সহায়তা থেকে শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন—তার মানবিক পদক্ষেপ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।
২১ জুলাইয়ের ঘটনায় নিহত ২১ পরিবারকে ৪২ লাখ টাকার অনুদান প্রদানে সহযোগিতা, কারাগারের ১,২৪৪ বন্দির জন্য ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন এবং এতিমখানার শিশুদের ইফতার ও পাঞ্জাবি উপহার—সবই তার মানবিক পদক্ষেপের আলোচিত উদাহরণ।
পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে নিজ হাতে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ তুলে নেওয়া, মাত্র ১১২ টাকায় সরকারি চাকরি পূরণ, প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রকাশ্য লটারি—তার উদ্যোগগুলো ছিল প্রশাসনিক স্বচ্ছতার নতুন মানদণ্ড।
হাসপাতালে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রদান, নবজাতকের আইসিইউ চালু, ফুটবল একাডেমির শিশুদের সহায়তা এবং দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর শিশুদের বিদ্যালয় চালু রাখতে দাতা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়—এসব কর্মকাণ্ড তার মানবিক নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করেছে।
রাজবাড়ীতে যোগ দিয়েই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদ ও আহত পরিবারদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যেই ‘মানবিক ডিসি’ হিসেবে জাতীয় পরিচিতি লাভ করেন।
১৯৭৯ সালের অক্টোবরে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে জন্ম জাহিদুল ইসলামের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্নের পর যুক্তরাজ্য থেকে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় এমএসসি করেন। ২০০৬ সালে ২৫তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসনে যোগ দিয়ে লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, মৌলভীবাজার, নোয়াখালীসহ একাধিক জেলায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। কমলগঞ্জে ইউএনও থাকাকালে জেলার শ্রেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি পান।
দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সাদি উর রহিম জাদিদ, পাঠান মো. সাইদুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক, মো. শরীফ উদ্দিনসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রামের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তাকে জেলার নতুন অভিভাবক হিসেবে স্বাগত জানানো হয়। জনবান্ধব, মানবিক এবং উন্নয়নমুখী প্রশাসন গড়ে তোলার প্রত্যয়ই হবে তার সামনের পথচলার মূল অঙ্গীকার।