বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে আমন জাতের ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। এ সময় ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন কৃষক- কৃষানীরা। অগ্রহায়ন মাসের শুরু থেকেই পুরো দমে আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু করেছে কৃষকেরা। ধানের কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার কৃষক ও শ্রমিকেরা। বাড়িতে বাড়িতে চলছে নবান্ন উৎসব।
আনন্দের এই ক্ষণে জামাতাসহ অন্য আত্মীয়-স্বজনদের আতিথেয়তার জন্য বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন অনেকে। সব মিলিয়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে গ্রামীণ জনপদে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আমন চাষ হয়েছে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার উপজেলার কৃষকেরা হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেছে ১৪শ হেক্টর , উফশী জাতের ধান চাষ করেছে ১০ হাজার ৫ শ ও স্থানীয় জাতের ১১০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৩ হাজার ২শ ৬০ মেট্রিক টন।
আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, কার্তিক মাসে ধান পাকার শেষ মুহুর্তে কিছু দিন বৃষ্টি হওয়ায় কিছু ধানের ক্ষতি হয়েছে। যা অতি সামান্য পরিমান হবে। এবছর প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে এতে লক্ষ্য মাত্রায় তেমন কোন প্রভাব পড়বে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মাঠে মাঠে এখন সোনালি আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ চলছে। কৃষকরা মাঠে কাজ করছেন উৎসবমুখর পরিবেশে। কেউ মেশিনে, আবার কেউ হাতে ধান মাড়াই করছেন। পাশাপাশি গরুর খাদ্য হিসেবে খড়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা পাচ্ছেন ভালো দাম। চাষাবাদে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা আশ্বস্ত হয়েছেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১২শ থেকে ১৩শ টাকায়। অসময়ে আগাম ফসল কাটার কাজ পেয়ে খুশি কৃষি শ্রমিকরাও। এ ধান বিক্রির টাকায় কৃষকরা ভুট্টার আবাদ করছেন, ফলে বাড়তি আয় আসায় তারা আনন্দিত। কৃষকদের দাবি, ভালো দাম পেলে এ ধরনের চাষাবাদে তারা আরও উৎসাহী হবেন।
স্থানীয় কৃষকদের ঘরে ঘরে এখন নতুন ধানের সুবাস। উঠোনে উঠোনে আত্মীয়-স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে পিঠা-পুলি খাওয়ার ব্যস্ততা। কেউ কেউ ধান মাড়াই করে সেগুলো হাটে নিয়ে বিক্রির জন্য নিয়ে ছুটছেন।
হাটশেরপুর এলাকার কৃষি শ্রমিক হেদায়েত বলেন, এ সময় মাঠে কাজ ছিল না। অনেক কষ্টে দিন পার হচ্ছিল। আগাম ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ পেয়ে সংসারের অভাব দূর হয়েছে। এ কাজ শেষ হলে ভুট্টা লাগানোর কাজ শুরু হবে।
সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের ধান কাটা শ্রমিকের দলনেতা রহিম হোসেন বলেন, প্রতি বিঘা জমির (৬০ শতাংশ) আমন ধান কাটতে কৃষকের কাছ থেকে ৬০০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। মোট ১২ জনের একটি দল ধান কেটে কৃষকের বাড়িতে দিয়ে আসছেন। গত বছর এ কাজে চার হাজার টাকা করে নিয়েছিলেন তাঁরা। এখন জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, কাজের মজুরিও তাই বেশি।
সারিয়াকান্দি কাজলা ইউনিয়নের কৃষক বলেন, গুটি স্বর্ণা, স্বর্ণা-৫ জাতসহ আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। এ বছর ধানের ফলন ভালো। ধান কাটা শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধে মাড়াই করে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। বর্তমানে হাটবাজারে প্রতি বস্তা ধান (৭৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকায়। নতুন ধান কেটে নবান্ন উৎসব না করে এখনো অনেকেই ওই চালের ভাত মুখ তোলেন না। নবান্ন শেষে বাড়ির জন্য ধান রেখে বাদবাকি গুলো বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে এসেছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, এবার আমন ধানের ফলন আশানুরূপ হয়েছে। গত মৌসুমের চেয়ে এবার ফলন বেশি। ধানের ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় কৃষকরা খুশি। উৎপাদন বাড়াতে দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি করতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
তিনি আরও বলেন, উপজেলায় ইতোমধ্যে আগাম আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে স্বল্পবয়সী ধান কাটা ও মাড়াই চলছে। মৌসুমের শুরু থেকে কৃষি বিভাগ প্রচার ও সহায়তার মাধ্যমে কৃষকদের পাশে রয়েছে।