জাতীয় পর্যায়ে উচ্চতর প্রশিক্ষনের জন্য মনোনিত জান্নাতুল ফেরদৌস জান্নাতি এখন দেশসেরা সাঁতারু হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। সে নাটোরের গুরুদাসপুর সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেনীর শিক্ষার্থী এবং পৌর সদরের খলিফাপাড়া মহল্লার দিনমজুর রফিকুল ইসলামের মেয়ে।
জানা যায়, সুইমিং ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনা ও বাংলাদেশ নৌবাহিনী আয়োজিত প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মেধাবী সম্ভাবনাময় ও সুবিধাবঞ্চিত সাঁতারুদের খুঁজতে দেশব্যাপী শুরু হয় সুইমার ট্যালেন্ট হান্ট। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ৭০ জন প্রতিযোগী নিয়ে এক মাসের সাঁতার প্রশিক্ষন নিয়েছিলো জান্নাতি। সেখান থেকে পাঁচজনকে ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহনের জন্য মনোনীত করা হয়। উচ্চতর প্রশিক্ষনে সুযোগ পাওয়া ২৩ শিশু সাঁতারুর একজন জান্নাতি।
জান্নাতি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই বাড়ির পাশের নন্দকুজা নদীতে সাঁতার কাটতাম। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে ফুটবল, নৃত্যে পদক পেয়েছি। নৌবাহিনীর সাঁতারের কোচ প্রতিবেশী আতিক ভাই আমাকে সাঁতারের জন্য উৎসাহ দেন। তার উৎসাহে উপজেলায় প্রশিক্ষন গ্রহণ করি। সবার সহযোগীতায় আমি দেশ সেরা সাতারু হতে চাই।”
জান্নাতির মা ঝর্না বেগম বলেন, “জান্নাতির বাবা দিনমুজুর। বাড়ির ৫ শতক জায়গা আমাদের সম্বল। দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে জান্নাতি সবার ছোট। অভাবের সংসারে মেয়ের সাফল্য ধরে রাখা সম্ভব নয়। সবার সহযোগীতা পেলে তার মেয়ে দেশের সুনাম বয়ে আনবে।
গুরুদাসপুর সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ লিপি রানী সরকার বলেন, জান্নাতির সাফল্যে আমরা গর্বিত। দোয়া করি ও সেরা সাতারু হয়ে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে দেশের সুনাম বয়ে আনুক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ বলেন, জান্নাতির মতো অনেক প্রতিভাবান লুকিয়ে আছে। প্রতিভাবান খুঁজে বের করে তাদের প্রতিভার বিকাশ ও পৃষ্ঠপোষকতা করছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধিত করা হবে।
গত ১৬ নভেম্বর সুইমিং ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় এবং নৌবাহিনীর সহায়তায় আয়োজিত ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ সমাপনী অনুষ্ঠানে পুরস্কার লাভ করে জান্নাতি। এর আগে সুইমার ট্যালেন্ট হান্টের প্রথম পর্বে দেশের ২ হাজার ৮৯ জন সাঁতারু থেকে প্রাথমিকভাবে ৬৩০ জন সাঁতারু বাছাই করা হয়। ছয়টি গ্রুপে ভাগ করে গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্সে বাছাই অনুশীলন হয়। পরে ৭০ জনকে (৪৭ জন বালক ও ২৩ জন বালিকা) চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হয়। আগামী বছর ২ বছর মেয়াদী আবাসিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ডাক পেয়েছে তারা। প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী সাঁতারুগণ পরবর্তীতে সরাসরি বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থায় চাকরির সুযোগ পাবে বলে জানা গেছে।