আদালতের রায় উপেক্ষা করে প্রায় ১১ মাস বন্ধ থাকা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বিতর্কিত ‘মা ব্রিকস’ ইটভাটা পুনরায় চালু করেছে মালিকপক্ষ। নতুন করে বয়লার চুল্লি বসিয়ে ইতোমধ্যেই ইট পোড়ানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
উল্লেখ্য, গত ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে লাইসেন্স না থাকা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকায় ইটভাটা পরিচালনার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা জেলা কার্যালয় ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রশাসন যৌথ অভিযান চালিয়ে ‘মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ’ ইটভাটা গুড়িয়ে দেয়। এসময় ইটভাটার মালিক, কাশিনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. খোরশেদ আলমকে এক লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হয়।
ইটভাটা গুড়িয়ে দেওয়ার পর দীর্ঘ ১১ মাস বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি মালিকপক্ষ নতুন ব্রয়লার চুল্লি নির্মাণ করে কার্যক্রম চালু করে। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়, ইটভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩–এর ৮ ধারা অনুযায়ী সরকারি স্কুল, মাদ্রাসা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাজার, মসজিদ ও আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা নিষিদ্ধ। কিন্তু ‘মা ব্রিকস’ এর পাশে রয়েছে মনিকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবতেদায়ি মাদ্রাসা, এতিমখানা, জামে মসজিদ, বসন্তপুর বাজার ও সরকারি স্বাস্থ্য ক্লিনিক। ফলে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন তারা।
বসন্তপুর বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল মতিন বলেন, ইটভাটার ধোঁয়ায় গাছের ফল পর্যন্ত পাকতে চায় না। ধুলাবালিতে আমাদের ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইটভাটা-সংলগ্ন বাড়ির শহীদ ও ছালামত উল্লাহর পরিবার বলেন, শুষ্ক মৌসুমে আমাদের বাড়িঘর ও গাছপালা লালচে ধুলায় ঢেকে যায়। শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জিসহ নানা রোগে ভুগছি।
এদিকে ইটভাটার মালিক খোরশেদ আলম দাবি করেন, হাইকোর্টে রিট করার পর ইটভাটা চালুর অনুমতি রয়েছে। তিনি বলেন, কোর্টের অনুমতির কপি সব দপ্তরে দেয়া হয়েছে। বারবার আমাকে জিজ্ঞেস না করে দপ্তরগুলোতে খোঁজ নিন।
তবে রিটের আদেশে ইটভাটা চালুর অনুমতি রয়েছে এমন কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি।
পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক জোবায়ের হোসেন বলেন, গত বছর আদালতের আদেশে ইটভাটা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। রিট করা হলেও এর নিষ্পত্তি হয়নি। আদালতের রায় ছাড়া ইটভাটা চালানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানটির পরিবেশ ছাড়পত্র বা জেলা প্রশাসনের কোনো অনুমোদনও নেই। বিষয়টি জানার পর আমরা নোটিশ করেছি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন বলেন, আদালতের রায়ের আলোকে আগের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। হাইকোর্টের রিটের আদেশ অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর সহযোগিতা চাইলে উপজেলা প্রশাসন তা প্রদান করবে।
এদিকে, ইটভাটার পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও শ্রমিকদের নিয়ে একটি মানববন্ধনও করেছেন মালিকপক্ষ যা নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।