পাহাড়ে দীর্ঘদিনের ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত, অবিশ্বাস ও অনাস্থার অবসান ঘটিয়ে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে হারানো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা এবং সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে মানিকছড়ি উপজেলা টাউন হলে 'সিএইচটি সম্প্রীতি জোট' এর উদ্যোগে আয়োজিত এই সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার থোয়াইচিং মং শাক। তিনি তার বক্তব্যে পাহাড়ে চলমান অস্থিরতা নিরসনে তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
ইঞ্জিনিয়ার থোয়াইচিং মং শাক বলেন, পাহাড়ে আমরা আর কোনো মায়ের বুক খালি হতে দেখতে চাই না। দীর্ঘদিন ধরে চলা ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত এবং একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস আমাদের সমাজকে পিছিয়ে দিচ্ছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো পাহাড়ে বসবাসরত সকল জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা এবং সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আমরা সংঘাতের পথ পরিহার করে সংলাপ ও সম্প্রীতির মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়ে তুলতে পাড়ায় পাড়ায় নিয়মিত সচেতনতা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছি।
স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের মুখপাত্র পাইশিখই মারমা বলেন, আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার আমরা এমন একটি পার্বত্য চট্টগ্রাম চাই যেখানে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। পাহাড়ের ১৪টি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি সকল বাঙালি, অবাঙ্গালির অধিকার বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যেই সিএইচটি সম্প্রতি জোটের জন্ম। ইতোমধ্যে সিএইচটি সম্প্রতি জোট পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালি, অবাঙ্গালিদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়নে ৮দফা নিয়ে পদযাত্রা শুরু করেছি। যা খুব শিগগিরই জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে তুলে ধরা হবে।
সিএইচটি সম্প্রীতি জোটের সংগঠক মো. ইসমাইল হোসেন রাফির সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মনিরুজ্জামান, সদর ইউপি'র প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন, ওলামা ঐক্য পরিষদ নেতা মাওলানা নাছির উদ্দীন, মুফতি মাইন উদ্দিন জামিল, মাওলানা গাজী আনোয়ার হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ নেতা মো. মোক্তাদীর হোসেন, সাংবাদিক আবদুল মান্নান, উপজেলা কার্বারী এসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যজ চৌধুরী, সিএইচটি জোট খাগড়াছড়ির কার্যকরী সদস্য মো. শাহিন আলম, বীরচন্দ্র কার্বারী প্রমূখ।
সভায় বক্তারা গভীর উদ্বেগের সাথে জানান, স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে সৃষ্ট বিভাজন পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। এই পরিস্থিতি উত্তরণে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের কুফল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এবং শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন।
বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপের আয়োজন করে বিদ্যমান অবিশ্বাস দূর করা এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তোলাই তাদের প্রধান এজেন্ডা। পাহাড়ে বসবাসরত প্রতিটি নাগরিকের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সমঅধিকার ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।