শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫ ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
আজ ঐতিহাসিক শিক্ষা দিবস
প্রকাশ: শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:১৩ PM আপডেট: ১৭.০৯.২০২২ ১২:৩১ PM
আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক ‘শিক্ষা দিবস’। ১৯৬২ সালের এই দিনে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল এ দেশের ছাত্রসমাজ। সেই লড়াইয়ে শহিদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুলসহ অনেকে। তাদের স্মরণে প্রতিবছর এ দিনটিকে ‘শিক্ষা দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির এবার ৬ দশক বা ৬০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। দিনটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠন আজ নানা কর্মসূচি পালন করছে।

পাকিস্তানের তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের দুই মাস পর ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। ‘শরীফ কমিশন’ নামে খ্যাত ওই কমিশনের প্রধান ছিলেন তৎকালীন শিক্ষা সচিব এসএম শরীফ। ১১ সদস্যের এ কমিশন ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট প্রতিবেদন দেয়। এ কমিশন শিক্ষা বিষয়ে যেসব প্রস্তাব দিয়েছিল তা প্রকারান্তরে শিক্ষা সংকোচনের পক্ষে ছিল। আর এ কারণেই ছাত্রসমাজ ফুঁসে উঠেছিল।

ওই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থার ফারাক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষায় বর্তমানে পাকিস্তানি আমল থেকে তেমন অগ্রগতি হয়নি। জ্ঞাননির্ভর অগ্রসর চিন্তার সমাজ তৈরির লক্ষ্য ছিল বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন। শরীফ কমিশনের শিক্ষানীতির লক্ষ্য ছিল এলিট শ্রেণি তৈরি। বর্তমানেও সেই বৈষম্যমূলক শিক্ষা আছে। তিনি আরও বলেন, তবে এটা ঠিক যে, শিক্ষানীতিবিরোধী সংগ্রাম সামনে থাকলেও নেপথ্যে ছিল এ দেশের ছাত্রসমাজের স্বাধিকার অর্জনের তীব্র বাসনা। এই আন্দোলনের পথপরিক্রমায়ই এসেছে মহান সফল একাত্তর।

শরীফ কমিশনের প্রস্তাবে সস্তায় শিক্ষা অর্জন করাকে ভুল ধারণা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। পাশাপাশি এতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ছাত্র বেতন বর্ধিত করার প্রস্তাব ছিল। ২৭ অধ্যায়ে বিভক্ত ওই প্রতিবেদনে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চতর স্তর পর্যন্ত সাধারণ, পেশামূলক শিক্ষা, শিক্ষক প্রসঙ্গ, শিক্ষার মাধ্যম, পাঠ্যপুস্তক, হরফ সমস্যা, প্রশাসন, অর্থ বরাদ্দ, শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিষয়ে বিস্তারিত সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। এতে আইয়ুব সরকারের ধর্মাশ্রয়ী, পুঁজিবাদী, রক্ষণশীল, সাম্রাজ্যবাদী শিক্ষা সংকোচন নীতির পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেছিল। আইয়ুব সরকার এ প্রতিবেদনের সুপারিশ গ্রহণ করে এবং তা ১৯৬২ সাল থেকে বাস্তবায়ন করতে শুরু করে। এতে শিক্ষাকে তিন স্তরে ভাগ করা হয়- প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চতর। ৫ বছরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও ৩ বছরে উচ্চতর ডিগ্রি কোর্স এবং দুই বছরের স্নাতকোত্তর কোর্সের ব্যবস্থা প্রস্তাব করা হয়। উচ্চশিক্ষা ধনিকশ্রেণির জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পাশ নম্বর ধরা হয় শতকরা ৫০, দ্বিতীয় বিভাগ শতকরা ৬০ এবং প্রথম বিভাগ শতকরা ৭০ নম্বর।

চাপিয়ে দেওয়া ওই নীতিকে তখন গণবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ছাত্র আন্দোলনের মুখে ১৯৬৪ সালে সরকার একটি সমঝোতায় এসে তাৎক্ষণিকভাবে কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বন্ধ করার ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীফ কমিশনের প্রতিবেদনে থাকা প্রস্তাবের থেকে বর্তমানে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার তেমন একটা ফারাক নেই। ’৭৪ সালের কুদরত-এ-খুদা শিক্ষানীতির প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ রেখেই একটি মোটামুটি গ্রহণযোগ্য শিক্ষানীতি ২০১০ সালে তৈরি করা হয়। কিন্তু সেটির মৌলিক দিক বাস্তবায়ন করা হয়নি। এ শিক্ষানীতিতে তিন স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে ৮ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা প্রস্তাব করা হয়। আর ছিল দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ৪ বছরের মাধ্যমিক শিক্ষা। এরপর উচ্চশিক্ষা স্তর শুরু হবে। আর বিদায় নেবে উচ্চ মাধ্যমিক। কিন্তু ১২ বছরেও ওইসব প্রস্তাব পাশ হয়নি। ৩ বছরের ডিগ্রি স্তর বহু আগেই বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে। এভাবে ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আছে, যা বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষানীতি উপেক্ষা করে ৫ম ও ৮ম শ্রেণি শেষে জাতীয়ভাবে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এতে কোচিং ও নোট-গাইড ব্যবসায়ী বিস্তার লাভ করেছে। শিক্ষকদের অনেকে ক্লাসরুমে না পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের টাকার বিনিময়ে ব্যক্তিগতভাবে পড়াতে বেশি আগ্রহী। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার বেসরকারিকরণ হয়েছে। সরকারিতেও ব্যয় আকাশছোঁয়া। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে বাজেটে আলাদা বরাদ্দও নেই। শিক্ষা খাত পরিচালনায় শিক্ষা আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটিও ফাইলবন্দি। উচ্চশিক্ষার প্রায় ৭০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এর মান নিয়ে আছে প্রশ্ন। বিভিন্ন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ ভয়াবহ। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে একাধিক কলেজে লুটপাটের প্রমাণও মিলেছে। অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা কিছুটা এগিয়েছে। কিন্তু সমাজে বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি ভার্সন, ইংরেজি মাধ্যম ইত্যাদি বিভাজন আছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা চালু হয়নি। শিক্ষকের জন্য স্বতন্ত্র পে-স্কেলও চালু হয়নি। সব মিলে শিক্ষা ব্যবস্থায় এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, বাস্তবায়নের জন্য ২০১০ সালের শিক্ষানীতি করা হয়নি। তাহলে এত টাকা খরচ করে অনেক মানুষের কষ্টের মাধ্যমে কেন এই নীতি তৈরি করা হলো।

-বাবু/এসআর
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত