মঙ্গলবার ৮ জুলাই ২০২৫ ২৪ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার ৮ জুলাই ২০২৫
কেয়ারার হোমকেয়ার ও বৃদ্বাশ্রম পদাবলী
জুয়েল সাদত
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২২, ৫:৪৭ PM
ইদানিং ইংল্যান্ড এ প্রচুর লেবার সংকট দেখা দিয়েছে। ৬০/৭০ টি ক্যাটাগরীতে লোকজন আসছেন। স্টুডেন্ট রা ডিপেন্ডেন্ড হিসাবে স্পাউস আনতে পারছেন। সিলেটে তো ভুয়া স্ত্রী ও স্বামী আনার এড চলছে। অনেকেই বিশ্বাস করবেন না, খোজ নিলে সত্যতা পাবেন। একজন স্টুডেন্ট আসার সময় বিবাহিত হলে তার স্পাউস আনা খুব সহজ। যিনি আসবেন তিনি টিকেট দিয়ে আরও কিছু খরচা পাতি দিয়ে আনছেন আগ্রহীদের । যদি বিবাহিত না হন। এ বিষয়ে আরেকদিন লিখব। ইংল্যান্ড এর অর্থনীতি নাজুক। কারী ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়েৃ যাবে। শেফ, তান্দুরী শেফ ছাড়াও ওয়েটাও দেশ থেকে আনা যায়।

আজকের প্রসঙ্গ ভিন্ন। এখন লন্ডনে কেয়ারার ভিসা খুব পপুলার। এটা সহজ। বৃদ্ব লোকজনদের দেখভাল করার জন্য কেয়ারার ভিসায় আসছেন অনেকেই বুজে না বুঝে। আপনি একজন বৃদ্বাশ্রম এর কর্মি হিসাবে আসছেন।  আপনি ভাল করে জানেন না, কি কাজ। আপনাকে যেন তেন ভাবে লন্ডনে পৌছাবে। আপনি না বুঝে ছুটছেন সেখানে। কেয়ারার হিসাবে আপনার কাজটা কেমন হতে যাবে জানেন না। আপনি একজন আয়া বা সহকারী নার্সের কাজে ওল্ড হোমে কাজ করবেন। আপনাকে অনেক শক্তিশালী হতে হবে। আপনি ২০০/২৫০ পাইন্ড ওজনের  ৭০/৮০/৯০ বছরের বৃদ্ব বৃদ্বাকে সেবা দিবেন। তাকে উঠা নামা করতে অনেক শক্তিশালী হতে হবে। আপনি মনে করছেন, কেয়ারার জবটা অনেক সহজ, আসলে ততটা সহজ না। যারা লন্ডনের কনসালটেন্সি করেন বা ট্রাভেলস ব্যবসায়ী তারা নানা প্রলোভন দেখিয়ে অনেককে কেয়ারার ভিসায় লন্ডন পাঠাচ্ছেন। যারা নিজের বৃদ্বা পিতা মাতাকে টেক কেয়ার করেন না তারা বিদেশী বুড়ো বুড়িদের দেখাশুনা করতে আসতে চাচ্ছেন। কেয়ারার রা কি কাজ করেন?  তারা বৃদ্বদের দাত ব্রাশ করা, বাথরুম করানো,গোসল করানো, ঔষধ খাওয়ানো, বাহিরে হাটা হাটি করানো,পেম্পার পরানো,বাজার করে দেয়া,রান্না করা,কাপড় ধোয়া সবই করতে হয়। এই ভিসায় যারা আসেন এই প্রফেশন চেঞ্জ করা কঠিন। তারপরও অনেকেই স্বপ্নের লন্ডন আসতে লাইনে আছেন।

হোম কেয়ার

আমেরিকায়  লন্ডনের কেয়ারা্ররে নাম হোম কেয়ার। বর্তমানে অনেক মহিলারা আমেরিকায় এই জবটা স্বাচ্ছন্দ্যে করছেন ২১ থেকে ২৩ ডলার ঘন্টায়। তবে আনন্দের সংবাদ বর্তমানে বাংলাদেশীরা হোম কেয়ার বিজনেস এ জড়িয়ে গেছেন। এখন হিসাব করলে বাংলাদেশীদের হোম কেয়ার বিজনেস অনেকগুলো নানা শহরে। এই হোম কেয়ার বিজনেসে শত শত হাজার জব ক্রিয়েট হয়েছে। বৃদ্ব নাগরিকদের ২৪ ঘন্টা সেবা দেবার কাজ। সামান্য কয়েক ঘন্টার ক্লাস করে বা হাতে কলমে ট্রেনিং নিয়ে অনেকেই এই প্রফেশনালে জড়িয়ে গেছেন। তবে অশনি সংকেত হচ্ছে, এই হোম কেয়ার বিজনেস টাতে অনেকেই অধিক মুনাফার জন্য নানা অনিয়ম করছেন। যেমন বৃদ্ব বা বৃদ্বা থাকেন বাফেলো সেখানে তাদের ২৪ ঘন্টা দেখাশুনা করা হচ্ছে, নিউ ইযর্কে বসে মেয়ে বা ছেলের বউ  স্যালারী নিচ্ছেন।  এই টাকা পয়সা নিয়ে পরিবারে নানা ঝামেলা হচ্ছে।  এক সময় নিউইয়র্ক এ খুব বেশী ফার্মেসী বিজনেসটা জমে গিয়েছিল,  পরে দেখা গেল সেই ফার্মেসী গুলোর বাংলাদেশী মালিকেরা অধিক মুনাফার লোভে মৃত মানুষ বা বাংলাদেশে অবস্থানরতদের নামে ঔষধ রিফিল করছেন । তারপর ধরা পরে অনেক ফার্মেসি বন্ধ। ঠিক তেমনি হোম কেয়ার ও বন্ধ হয়ে যাবে। শিকাগোতে অনেক সময় বিনা নোটিশে যে সকল বাসায় হোম কেয়ারের চাকরি করেন ভিজিট করতে সরকারী লোক আসে। আগে একটা সময় হোম ভিজিট করতে আগাম জানান দিয়ে আসত, তখন সেই দিন, সেই বৃদ্ব বাবা  মাকে সেই বাসায় হাজির করা হত। তাদের কাছে এই অনিয়ম ইনফরমড হওয়াতে  ইদানীং সংশ্লিষ্ট দপ্তর না জানিয়ে আসে । এ ভাল সম্ভাবনাময় শিল্পটাও ঝুকির মুখে। তাই হোম কেয়ার নিয়ে যারা অনিয়ম করছেন তাদের কারনে অনেক জেনুইন বিজনেসম্যান তাদের ব্যবসা এগুতে পারবেন না আাগামীতে। বাংলাদেশীদের মাঝে যে সম্ভাবনা থাকে তা অনিয়মের কারনে অনেক সময় বন্ধ হয়ে যায়।

বৃদ্বাশ্রম পদাবলী

বাংলাদেশীদের কাছে বৃদ্বাশ্রম কনসেপ্টটা ১৫ /১৭ বছরের পুরোনো। যদিও আজ শ খানেক বৃদ্বাশ্রম। বর্তমানে সরকারী বেসরকারি পর্যায়ে বৃদ্বাশ্রম রয়েছে।তবে বিদেশে এটা একটি বিজনেস কনসেপ্ট হলেও বাংলাদেশীদের কাছে বাংলাদেশে এটা একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। অনেকেই নিজে জায়গা কিনে স্থাপনা বানিয়ে দেশের নানা জায়গায় অসহায় বৃদ্ব বা বৃদ্বাদের ফ্রি থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেৃ থাকেন। তবে বানিজ্যিক হিসাবে অনেকের এই বৃদ্বাশ্রম ব্যবসা করছেন। বিশেষ করে উউচ্চবিত্ত মানুষের কথা বিবেচনা আধুনিক সুবিধা দিয়ে বৃদ্বাশ্রম হয়েছে বাংলাদেশে অনেকগুলো। যেখানে মাসে ১০/১৫/২০ হাজার টাকা দিয়ে অনেকেই থাকছেন বা সন্তানরা পিতা মাতাকে রাখেন। তবে বৃদ্বাশ্রমগুলো বাংলাদেশে বেশীর ভাগ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের জন্য হয়ে থাকে।  মানবিক গুণাবলীর অনেক মানুষ একক বা কয়েকজন মিলে এই প্রতিষ্ঠান গুলো পরিচালনা করেন। অনেক ব্যয়বহুল এই সব প্রতিষ্ঠানগুলো তারা চালিয়ে যান।  সেখানে যারা থাকেন তারা তেমন টাকা  পয়সা দিতে পারেন না, তবে থাকেন। অনেক দানশীল ব্যাক্তি এই সব প্রতিষ্ঠানে দান করে থাকেন নীরবে। বিদেশের মত এই সব প্রতিষ্টানে যারা কাজ করেন এবং বৃদ্ব বৃদ্বাদের দেখাশুনা করেন তারা নামমাত্র বেতন পান। তারা তাদের কষ্টের মুল্যায়ন পান না, তারা এই চাকরীটা করেন পুন্য সঞ্চয়ের আশায়। আল্লাহর নিকট থেকে রিওয়ার্ড পাওয়ার আশায়। তেমনি যারা বৃদ্বাশ্রম পরিচালনা করেন তারা সদকা জাকাতের টাকা দিয়ে বা কালেক্ট করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করে থাকেন।

বিদেশে যে ব্যবসা করে কেউ মুনাফা করছেন বাংলাদেশে সেই একই জিনিস করছেন খরচের খাতায় রেখে। বিদেশে এই ব্যবসাটাকে  ব্যবহার করছেন অবৈধ উপায়ে সেখানে বাংলাদেশে একই বিজনেস করে অনেকে প্রতিনিয়ত অসহায়দের, ভবঘুরেদের নতুন জীবন দান করছেন। কেয়ারার, হোম কেয়ার বা বৃদ্বাশ্রম  যাই আমরা বলি না কেন, বয়স হলে আমাদের সকলকে পরনির্ভরতায় ভুগতে হবে। বিদেশে আমরা যারা আছি আমাদের জন্য কঠিন সময় আসছে। প্রবাসীরা নি:সঙ্গ, যখন তাদের বয়স হয়ে যায় তখন তাদের দেখাশোনা করার জন্য কেউ থাকে না। সন্তান রা ব্যস্ত জীবনে অভ্যস্ত, হোম কেয়ার ছাড়া তাদের গতি নাই। এই হোম কেয়ার প্রফেশনালরাই বিদেশে সন্তানদের কাজ করে  থাকেন।  যে সন্তানদের সুখের জন্য জীবন পার করেছেন, তাদের কোন সময় নাই বাপ মা দের জন্য। এ এক কঠিন বাস্তবতায় নিমজ্জিত সমাজ। 

বাবু/জেএম


« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত