'ক্যালসিয়াম' শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এর উপকারিতা এবং এর অভাবে আমাদের দেহে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ক্যালসিয়াম আমাদের দেহের জন্য অতি আবশ্যক। এটি আমাদের হাড়কে মজবুত করে। আমাদের শরীরের প্রায় ৯৯% ক্যালসিয়াম থাকে যার কিছ অংশ হাড়ে, কিছু দাঁতে, কিছু সফট টিস্যুতে এবং কিছু ফ্লুইডের মধ্যে থাকে। প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সাতশ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়ার প্রয়োজন হয়। তবে গর্ভাবস্থায় এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মায়েদের সাতশ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের সাথে আরও কিছু বাড়তি ক্যালসিয়াম দেহে প্রয়োজন হয়।
>>ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবার
দুধ ও দুধ দিয়ে তৈরি খাবারে সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। দুধ, দই, মাখন, টফু এবং দুগ্ধ জাতীয় খাবার থেকে প্রচুর ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
গরু, খাসি ও মুরগির মাংস, ডিম, কলিজা, এবং ছোট মাছের কাঁটায়ও রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। তবে মাছের মধ্যে মলা, কাচকি, মাগুর, শিং, কই, কোরাল ও সামুদ্রিক মাছে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ তুলনা মূলকভাবে বেশি থাকে।
শাকসবজির মাঝে কচুর শাক, পালং শাক, কলার মোচা, কাঁচকলা, কচুর লতি, চালকুমড়া, কচু, শালগম, সজনে ডাঁটা, বাধাকপি, মটরশুঁটি, মিষ্টি আলু, মাশরুম, লেটুসপাতা, ঢেঁড়স, ধনেপাতা, ধুন্দুল, করলা ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।
ক্যালসিয়ামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস সাইট্রাস জাতীয় ফল। কমলালেবু, পেয়ারা, কাঠবাদাম, তরমুজ, জলপাই, কাজুবাদাম, আপেল, আখরোট বাদাম, খেজুর, কলা, পাকা পেঁপে, আনারস, আঙ্গুর, কাঁঠাল, লিচু, আম, জাম, স্ট্রবেরি ইত্যাদি ক্যালসিয়ামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
সাদা ভাত, কাবলি ছোলা, মটরশুটি, তিল ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। যা আমাদের দেহের হাড় মজবুতে সহায়তা করে থাকে।
>>ক্যালসিয়াম অভাবজনিত রোগসমূহ
ক্যালসিয়ামের অভাবে আমাদের দেহে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়। ক্যালসিয়ামের অভাবে যে রোগগুলো দেখা দেয় সেগুলো হলো:
নখের দৃঢ়তা কমে যায়। আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে আপনার নখ নরম, ভঙ্গুর ও দৃঢ়তাহীন হয়ে যাবে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে মহিলাদের পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথা হয়। ক্যালসিয়ামের অভাবে বিভিন্ন স্নায়ুবিক সমস্যা, মাথা ব্যথা হয়। এছাড়া ও ডিপ্রেশন, ইনসোমনিয়া দেখা যায়।
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে জীবাণু বা প্যাথোজেন মোকাবেলা করার শক্তি কমে যায়। ক্যালসিয়ামের অভাবে হাইপোক্যালসিয়মিয়া হয়ে পেশির টিট্যানি রোগ হয়। ক্যালসিয়াম হৃদপিণ্ডের সঠিক কার্যচালনার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। এর অভাব হলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাবে কেননা ক্যালসিয়াম হৃদপিন্ডের রক্তকে পাম্প করতে সহায়তা করে।
ক্যালসিয়ামের অভাবে রিকেট রোগ দেখা দেয়। এজন্য হাড় নরম ও দুর্বল হয়ে পড়ে। ক্যালসিয়ামের দীর্ঘস্থায়ী অভাবে হাড় ফ্র্যাকচারও হয়ে থাকে। আর মেয়েদের মনোপোজের পর হাড় ফ্র্যাকচার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই বয়ঃসন্ধিকালে অবশ্যই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিৎ।
ক্যালসিয়ামের অভাবে অস্টিয়োপোরোসিস বা হাড় ক্ষয়ের রোগ হয়। এই রোগ প্রতিকারে চিকিৎসকরা সাধারণত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন 'ডি' সাপ্লিমেন্ট দিয়ে থাকেন। হাড়ের গঠন ও শক্তিবর্ধনে বেশির ভাগ ক্যালসিয়াম কাজে লাগে। খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার না থাকলে হাড়ের গঠন দুর্বল হয়ে যায়। তাই খাবারের মেনুতে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। সুস্থ্য থাকুন।
-বাবু/এ.এস