ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়া, দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে গতকাল শনিবার সারা দেশে গণমিছিল করেছে বিএনপি। এই কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, এলডিপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য বিরোধী দল। গণমিছিল কর্মসূচিতে বিভিন্নস্থানে বাধা দেয়া হয়েছে বলে দাবী করেছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের গণমিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রাজশাহীতে, আবদুল মঈন খান খুলনায়, নজরুল ইসলাম খান কুমিল্লায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বরিশালে, সেলিমা রহমান গাজীপুরে, ইকবাল হাসান মাহমুদ ময়মনসিংহে। এছাড়া সিলেটে মো. শাহজাহান, কিশোরগঞ্জে আবদুল আউয়াল মিন্টু, নোয়াখালীতে শামসুজ্জামান, সুনামগঞ্জে আহমেদ আজম খান, নারায়ণগঞ্জে জয়নুল আবেদীন, ফরিদপুরে নিতাই রায় চৌধুরী, বগুড়ায় আমানউল্লাহ আমান, দিনাজপুরে মিজানুর রহমান (মিনু), চাঁদপুরে জয়নুল আবদিন ফারুক, ভোলায় মুজিবুর রহমান সরোয়ার, যশোরে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন ও রাজবাড়ীতে হাবিব-উন নবী খান গণমিছিলে নেতৃত্ব দেন।
এদিকে, বিএনপি অভিযোগ করে বলেছে, ঢাকার গণসমাবেশের আগে সরকার যেভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন, গ্রেপ্তার করেছিল, ৩০ ডিসেম্বরের কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য একই কায়দায় দমন-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী, নোয়াখালীতে বিএনপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুধারাম থানার পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) যৌথ অভিযান চালিয়ে নোয়াখালী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। সেখান থেকে নোয়াখালী পৌর বিএনপির সভাপতি আবু নাছেরসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ২৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো মামলার আসামি।
চুয়াডাঙ্গায় নাশকতার মামলায় সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম ও সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমানউল্লাহ আমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের সদর উপজেলার পৃথক দুটি জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, নোয়াখালীতে গণমিছিলের প্রস্তুতি বৈঠক থেকে কোনো কারণ ছাড়াই বিএনপির ২৪ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর রাতভর নোয়াখালীতে বিএনপির নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের গ্রেপ্তারের জন্য তল্লাশি অভিযান চালানো হয় এবং তাদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা হয়। গণমিছিলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাদের ফোন করে গায়েবি মামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পেতে মানুষ রাস্তায় নেমেছে: আমীর খসরু
বরিশালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সরকারের কাছে মেসেজ চলে গেছে; এ দেশের মানুষ আর ভোটচুরি মেনে নেবে না। এবার ভোটচোরদের হাতেনাতে ধরে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নির্বাচিত সরকার করবে। সেই সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। তাই আজকে দেশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে শনিবার দুপুরে বরিশাল মহানগর, জেলা বিএনপি দক্ষিণ ও উত্তরের উদ্যোগে এ গণমিছিল হয়েছে। আমীর খসরু আরও বলেন, সরকার ইতোমধ্যে শত শত মানুষকে গুম, ক্রসফায়ার ও পুলিশি হেফাজতে নিয়ে হত্যা করেছে। সম্প্রতি বিএনপির ১৩ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে এতদিন ক্ষমতায় থাকলেও বর্তমানে দেশের মানুষ ভয়কে জয় করে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পতনের জন্য রাস্তায় নেমেছে। কোনো শক্তি গুলি, খুন, গুম, নির্বিচারে হত্যা করে এই জনগণকে থামাতে পারবে না। অতীতের মতো এবারও দেশের মানুষ গণতন্ত্রের আন্দোলনে জয়ী হবে।
নীলফামারীতে বিএনপির গণমিছিলে পুলিশের বাধা, অবরুদ্ধ নেতারা
বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে শনিবার সকাল ১১টায় নীলফামারী জেলা বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি পুলিশ। নেতাকর্মীদের ধাওয়া ও দলের সভাপতি আ খ ম আলমগীর সরকারকে দুই ঘণ্টা পুলিশ ঘিরে রেখে অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ। পরে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান কোকোসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী বিএনপি অফিস চত্বরে আসলে পুলিশ তাদেরকেও অবরুদ্ধ করে রাখে। নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আ খ ম আলমগীর সরকার অভিযোগ করে বলেন, আমরা প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। তারাও আমাদের কার্যক্রমে অনুমতি দিয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বিএনপি ও এর সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিএনপির পৌর মার্কেটস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ে জড়ো হতে থাকে। গণতন্ত্রের দেশে পুলিশ অগণতান্ত্রিক আচরণ করেন। নীলফামারী থানার ওসি আব্দুর রউফ লাঠি হাতে নিয়ে নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
মুন্সীগঞ্জে বিএনপির গণমিছিলে পুলিশি বাধার অভিযোগ
মুন্সীগঞ্জে বিএনপির গণমিছিলে পুলিশের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপির আয়োজনে মিছিল বের হয়। সদর উপজেলার পঞ্চাসার ইউনিয়নের মুক্তারপুর এলাকায় গণমিছিল বের করতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সব কেন্দ্রীয় নেতার মুক্তির দাবিতে গণমিছিলের আয়োজন করা হয়। কিন্তু পঞ্চসার ইউনিয়নের গোসাইবাগ এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে মুক্তারপুর পুরনো ফেরিঘাট এলাকার প্রধান সড়কে উঠতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে তারা পঞ্চসার ইউনিয়ন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে পথসভা করেন।
৩০ ডিসেম্বর ঢাকার খেলা হবে: নারায়ণগঞ্জে জয়নাল আবেদীন
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেছেন, আওয়ামী লীগের একজন নেতা প্রায়ই বলেন মাঠে খেলা হবে। তাকে আজ বলতে চাই ১০টি খেলায় বিএনপি জিতেছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বরে ঢাকার খেলা হবে। সে খেলায় বিএনপি জিতবে। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের মিশনপাড়ায় হোশিয়ারি সমিতি মিলনায়তনের গলিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচির আগে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
নোয়াখালীতে বিএনপির গণমিছিলে পুলিশের বাধা
নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে বিএনপির গণমিছিলে পুলিশের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মিরা এ গণমিছিল বের করেন। বিএনপির গণমিছিলকে কেন্দ্র করে শনিবার সকালের দিকে জেলার ৯টি উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মিরা নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। পরে জেলা জামে মসজিদের সামনে পৌঁছালে পুলিশী বাধার মুখে গণমিছিল শেষ হয়। সেখানেই তারা অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ সভা করেন। জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসির সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
বাবু/জেএম