ভারতীয় ছবি আমদানী নিয়ে বিতর্কের কোন শেষ নেই। নানা সময়ে এই নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় ‘পাঠান’ ছবি আমদানী নিয়ে আবারো পুরনো বিতর্কে নতুন করে জোয়ার উঠেছে। হল মালিকরা বরাবরই ভারতীয় ছবি আমদানীর পক্ষে। আবার শিল্পীদের মধ্যে বেশীরভাগই এর বিরোধীতা করে আসছেন। এর মধ্যে প্রদর্শক সমিতির নেতার মালিকাধীন দেশের অন্যতম প্রেক্ষাগৃহ মধুমিতা সিনেমা হল বন্ধ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অতিতেও দেখা গেছে নানা সময়ে হলটি ‘খোলা-বন্ধের’ মধ্যেই সময় পার করে আসছে।
ভারতীয় ছবি আমদানীর আলোচনার মধ্যেই আবারো হলটি বন্ধ করে দেয়া হলো। হলটির মালিক ইফতেখার নওশাদ আগ থেকেই ভারতীয় ছবি আমদানীর পক্ষে কথা বলে আসছেন। হল মালিক নওশাদ বলেছিলেন, “বছরের পর বছর লোকসানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এভাবে সম্ভব না। হল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুই-একের মধ্যেই বন্ধ করে দেব। যদি বলিউডের ‘পাঠান’ মুক্তির অনুমতি পায় তাহলে ভিন্ন চিন্তা করব।”
এ দিকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার হঠাৎ করেই আমদানীকৃত ছবির লভ্যাংশ থেকে অর্থ দাবী করেছেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে চলমার বিতর্কে নতুন মাত্রা পায়।
জানা যায়, বাংলাদেশে বিদেশি বিশেষ করে ভারতীয় সিনেমা চালানো নিয়ে অনেকদিন ধরেই একটি মহল প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। হল মালিকরা হিন্দি সিনেমা আমদানি ও প্রদর্শনে আগ্রহী। তাদের যুক্তি- সিনেমা হল বাঁচাতে হলে হিন্দি ও অন্য সিনেমা আমদানি করা জরুরি। অন্যদিকে, চলচ্চিত্রের শিল্পী কলাকুশলী, নির্মাতা ও প্রযোজকদের অনেকে এর তীব্র বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, এতে আমাদের চলচ্চিত্র পিছিয়ে যাবে, ধ্বংস হয়ে যাবে। শিল্পী, প্রযোজক ও নির্মাতারা পথে বসবেন।
সরকারও বিদেশি সিনেমা আমদানির ক্ষেত্রে নীতিমালা করে দিয়েছে। সেই নীতিমালা মেলে ইতোমধ্যে কলকাতার কিছু সিনেমা আমদানি করে দেশের হলে মুক্তি দেয়া হয়। তবে সেসব সিনেমা মোটেই চলেনি।
অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল বলেন, আমাদের চলচ্চিত্রকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। আমরা দেখেছি, হিন্দি সিনেমা মুক্তি দেয়ার ফলে নেপালের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি কিভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশটির সমৃদ্ধ সিনেমা হিন্দি সিনেমার কবলে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের দেশে যদি একের পর এক হিন্দি সিনেমা চালানো হয়, তাহলে আমাদের চলচ্চিত্রও ধ্বংস হয়ে যাবে।
এই অভিনেতা আরো বলেন, হিন্দি সিনেমা সরাসরি আমদানি মানে আমাদের নিজস্ব শিল্পসংস্কৃতি ধ্বংস করা। দর্শক আমাদের দেশের শিল্প ও সংস্কৃতির সিনেমাই দেখতে চায়। ইতোমধ্যে ‘হাওয়া’, ‘পরান’সহ আরও বেশ কিছু সিনেমা দিয়ে আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। সিনেমাগুলো কোটি টাকা ব্যবসা করেছে। যে সিনেমা হলের সংখ্যা ৪০-৫০ এ নেমে এসেছিল, এখন তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। অনেকে এখন সিনেমা নির্মাণ করছেন। আমার পাঁচটি সিনেমা মুক্তির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী রোজার ঈদে একটি, কোরবানির ঈদে একটি, দুই ঈদের মাঝে একটি এবং কোরবানির ঈদের পর বাকি দুটি সিনেমা মুক্তি দেব। আরও ছয়-সাতটি সিনেমার কাজ চলছে। অন্যদের সিনেমারও কাজ চলছে। এসব সিনেমা মুক্তি পেলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াবে।
-বাবু/এ.এস