মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চালা ইউনিয়নের দিয়ার বিলে পলো বাইচ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার সকাল আট থেকে শুরু হওয়া এ উৎসবে উপজেলার বয়ড়া, বলড়া, রামকৃষ্ণপুর, চালা, গাল ইউনিয়নসহ ঘিওর, শিবালয় ও ঢাকার দোহারের কয়েকশ সৌখিন মাছ শিকারি অংশ নেন।
সৌখিন মাছ শিকারিরা জানান, তারা হরিরামপুরের মেহেন্দিপুর চর, নারায়ণ কান্দি, ভাতছালা বিল, ফোজনগরসহ বিভিন্ন এলাকার পলো বাইচে যান। কেউ কেউ দৌলতপুরের বাচামারা, ঘিওরের শোলধারা, দিঘিসহ বিভিন্ন উপজেলার পলো বাইচেও অংশ নেন। আজ সোমবার সকাল ৮টা থেকে হরিরামপুর, শিবালয়, ঘিওরের অনেকে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, হ্যালোবাইক, নছিমনে এমনকি হেঁটেও মাছ ধরতে এসেছেন। সকাল নয়টার দিকে পলো, ঝাঁকি জাল, দোরাসহ নানা ধরনের উপকরণ নিয়ে মাছ ধরায় মেতে ওঠেন তারা।
ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের উভাজানী এলাকার আবুল ও কালাম বলেন, ‘আমরা আশপাশের এলাকার কয়েকজন নছিমন ভাড়া করে পলো বাইচ এ আসছি। আমি শোল আর নলা (ছোট রুই) পেয়েছি কয়েকটি।’
হরিরামপুর উপজেলার চালা ইউনিয়নের সাটিনওদা এলাকার মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমগো গ্রাম থেকে ২০ জনের মতো পলো বাইচে আইছি। পলো উৎসবে আমরা অনেক আনন্দ করছি। পলো দিয়ে বোয়াল মাছ ধরার পর আমার আনন্দ আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।’ দেড়- দুই কেজি ওজনের বোয়াল পেয়েছি। তবে আগের মতো এখন আর পলো উৎসব হয় না বলে জানালেন তিনি।
কামারঘোনা এলাকার মাইন উদ্দিন (৫০) বলেন, ‘একটা শোল, একটা কাতল আর ৪টা নলা মাছ পাইছি। পানি কামরে চুলকাচ্ছে, কষ্ট হইছে তবে মাছ পেয়ে আনন্দ পাইছি। এ আনন্দ বলে শেষ করা যাবে না।’ চালা ইউনিয়নের চালা গ্রামের কিশোর নয়ন বলেন, দুইডা শইল পাইছি, কয়ডা নলা পাইছি। তয় পানি কামর (ময়লা পানিতে চুলকানি) খাইছি।
যাত্রাপুর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী আলমাছ খান বলেন, যারা মাছ ধরতে আসছে শতকরা ৯০ ভাগই মাছ পাইছে। আমি ১৫ বছর পর শখ করে মাছ ধরতে আসছি। তবে মাছ পেলাম না।
হরিরামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, ‘পলো বাইচ উৎসব গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। কেউ মাছ ধরতে পারুক আর না পারুক সবার অংশগ্রহণে এ উৎসবে আনন্দের কোন কমতি থাকে না।’
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, পলোবাইচের কথা শুনে নিজেরও মাছ ধরার ইচ্ছে জেগেছে। সৌখিন মৎস শিকারি বলে কেউ মাছ ধরতে পারুক আর না পারুক সবার অংশগ্রহণে এ উৎসবে আনন্দের কোন কমতি থাকে না।
বাবু/জেএম