শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫ ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
মসজিদের অর্থ আত্মসাৎ
সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ
জাকারিয়া হৃদয়, পটুয়াখালী (বরিশাল)
প্রকাশ: রবিবার, ৫ মার্চ, ২০২৩, ৩:৫১ PM
সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বর্তমান পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান এর বিরুদ্ধে করা মসজিদের অর্থ সম্পদ ও সরকারি অনুদান আত্মসাতের অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক (ভারপ্রাপ্ত) একেএম এনামুল করিম’র আদালত গত ১লা মার্চ বুধবার এ নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. শাহ আলম ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলার খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের কার্যকরী পরিষদের সদস্য, পৌর শহরের লঞ্চঘাট সড়কের মো. আব্দুল হান্নান বেপারী বাদী হয়ে মো. মাহবুবুর রহমান, সাবেক মেয়র ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান, তাঁর স্ত্রী সুরাইয়া নাসরিন, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ, সাব-রেজিষ্ট্রারসহ অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ১০৭, ১০৯, ১২০(ক), ১৬৭, ৪০৫, ৪০৬, ৪০৮, ৪০৯, ৪১৫, ৪২০, ৪৬৩, ৪৭৭(ক) এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এর ৫(২) এবং ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন এর ২৭ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার বিবরণ বলা হয়, কলাপাড়া পৌরসভার তৎকালীন মেয়র থাকাকালীন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন আসামিদ্বয় পরস্পর যোগসাজশে এবং একে অপরের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় উপজেলা প্রাশসনের সরকারি বরাদ্ধ, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৫০ হাজার টাকা এবং ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ৩০ হাজার টাকা মসজিদের উন্নয়নকল্পে গ্রহণ করেন।

কিন্তু উক্ত টাকা মসজিদের অনুকূলে জমা না করে এবং কোনরূপ উন্নয়নমূলক কাজ না করে তা আত্মসাৎ করেছেন। ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা/নগদ টাকা) কর্মসূচির আওতায় ২য় পর্যায়ে এলাকাভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়নের নিমিত্তে ১নং আসামির নির্বাচনী এলাকা ১১৪, পটুয়াখালী-০৪ সংসদ সদস্যের অনুকূলে বরাদ্ধকৃত ৫০ লাখ ৬২ হাজার ৫শ টাকা, কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের ঈদগাহ মাঠের অসমাপ্ত অংশ সমাপ্তকরণ ও মাঠ সলিং প্রকল্পের নামে ১ ও ২ নং আসামি ৫ লাখ টাকা বরাদ্ধ নিয়ে কোনরূপ কাজ না করে এবং মসজিদ ফান্ডে জমা না দিয়ে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় সংসদ সদস্যের অনুকূলে দুইশত মেট্রিকটন খাদ্যশস্য’র মধ্য থেকে কলাপাড়া কেন্দ্রীয় বড়জামে মসজিদের ঈদগাহ’র অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ ও সোলার প্যানেল স্থাপন এর জন্য ৫০ মেট্রিকটন খাদ্য শস্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্ধ দেয়া হয় যাহার তৎকালীন বাজারমূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা ছিল। উক্ত বরাদ্ধকৃত ৫০ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য ১নং ও ২নং আসামি অন্যান্য আসামিগণের সহায়তায় মসজিদ অনুকূলে বিক্রিত অর্থ বা খাদ্য শস্য জমা না দিয়ে এবং কোনরূপ উন্নয়ন কাজ না করে আত্মসাৎ করেছেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের ঈদগাহ মাঠ এর উন্নয়নকল্পে বরাদ্দকৃত ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১ ও ২নং আসামি গ্রহণ করে অন্যান্য আসামিদের সহায়তায় উক্ত টাকার কোনরূপ উন্নয়নমূলক কাজ না করে আত্মসাৎ করেছেন। জেলা পরিষদ, পটুয়াখালী থেকে ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে মসজিদের ঈমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমের আবাসস্থল ও ঈদগাহ মাঠ উন্নয়নের জন্য ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়, যা মসজিদ কমিটির সদস্য (বর্তমানে প্রয়াত) মীর আবদুল বারেককে উত্তোলন করার ক্ষমতা দেয়া হয়, কিন্তু উক্ত ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করে কোনরূপ কাজ না করে ১ ও ২নং আসামি অন্যান্য আসামিদের সহায়তায় আত্মসাৎ করেছেন। 

এ সকল সরকারি অনুদানের স্মারক নম্বর, চেক নম্বর ও গ্রহণের তারিখ মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ওয়াকফ অর্ডিন্যান্স ১৯৬২ এর ৫৬ (১) ধারা মোতাবেক মসজিদের কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রিতে ওয়াকফ এর অনুমতি নেয়ার বিধান থাকলেও তা উপেক্ষা করে ১১টি ছাপ কবলা দলিলের মাধ্যমে ১ থেকে ৫ নং আসামি পরস্পর যোগসাজসে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে এসব বিষয় অস্বীকার করে মামলার ২নং আসামি সাবেক মেয়র ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান জানান, ‘মসজিদ নির্মাণ ও সম্পত্তি ক্রয়, বিক্রয়ে কোন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। তৎকালীন ইউএনও কমিটির সভাপতি এবং থানার ওসি ছিল সহ-সভাপতি। সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েই সবকিছু করা হয়েছে।’ তিনি জানান, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যখনই আমি মাঠে কাজ করা শুরু করেছি, ঠিক কখনই আমার ক্লিন ইমেজকে নষ্ট করার জন্য টাকার বিনিময় একজন অখ্যাত ব্যক্তিকে বাদী বানিয়ে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা করছে একটি কুচক্রি মহল।”  

অপরদিকে মামলার ১নং আসামি সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান কলাপাড়া উপওেজলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করা হলে তার বাসার কেয়ারটেকার মো. জলিলুর রহমান জানান, ‘স্যার রুম আটকিয়ে বিশ্রামে আছেন। আপনি পরে ফোন দিয়েন।’ 

বাবু/জেএম
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  অর্থ   আত্মসাৎ  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত