শুক্রবার ৪ জুলাই ২০২৫ ২০ আষাঢ় ১৪৩২
শুক্রবার ৪ জুলাই ২০২৫
নবীজির ছেলেবেলা যেমন ছিল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩, ১০:১৭ PM
ইতিহাসবিদদের মতে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন নবীজি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জন্মের পূর্বেই বাবাকে হারান তিনি। এরপর শৈশবেই মাত্র ৬ বছর বয়সে মাকে এবং ৮ বছর বয়েসে দাদাকে হারান।

আপজনদের হারিয়ে চাচা আবু তালেবের কাছে

একান্ত আপজনদের হারিয়ে চাচা আবু তালেবের কাছে লালিতপালিত হন শিশু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আবু তালেব নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তাকে আগলে রেখেছিলেন নিজের মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত।

শিশু মুহাম্মদকে নিজের সন্তানদের মতো করে ভালোবাসতেন তিনি। তার চাওয়া পাওয়া, আব্দারের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতেন। 

দুধ মা হালিমার কোলে

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের পর তৎকালীন অভিজাত আরবদের রীতি অনুযায়ী তাকে মক্কার বাইরে মরুভূমির মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠার ব্যবস্থা করা হয়। একজন দুধমায়ের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয়।

মা হালিমার কষ্ট-অভাবের অবসান

শিশু মুহাম্মদের দুধ মা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন বনু সাদ গোত্রের হালিমা। দুধের শিশু মুহাম্মদের দায়িত্ব গ্রহণের আগে বনু সাদ গোত্রে দুর্ভিক্ষ চলছিলো। চারণভূমিতে গৃহপালিত পশুদের খাবার মতো ঘাস ছিলো না। কিন্তু শিশু মুহাম্মদের দায়িত্ব গ্রহণের পরই হালিমার সব অভাব দূর হয়ে যায়।

শিশু মুহাম্মদ সম্পর্কে মা হালিমা

মা হালিমা বলেন, আমি শিশু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার ঘরে আনার পর সব অভাব মোচন হয়ে যায়। তাকে আনার পর আমার উভয় স্তন দুধে পূর্ণ হয়ে গেল। শিশু মুহাম্মদ কেবল আমার একটি স্তনই পান করতেন এবং অপরটি তার অপর দুধভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন। উটনির স্তনগুলো দুধে ভরে গেল। আমাদের গাধা (বাহন)টি দ্রুতগতিসম্পন্ন হয়ে গেল। বকরিগুলো চারণভূমি থেকে ভরা পেটে ও ভরা স্তনে ফিরে আসত।

এসব দেখে হালিমার স্বামী তাকে বললেন, হালিমা! তোমার কোলের শিশুটি অনেক বরকতময়।

আবারো মা হালিমার কোলে শিশু মুহাম্মদ

মুহাম্মদ সা.কে দুই বছর লালনপালন করেন হালিমা। এরপর যখন মুহাম্মদকে ফিরিয়ে দেওয়ার সময় হয়, কিছুতেই হালিমার মন সায় দিচ্ছিলোনা ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু নিয়ম মেনে প্রিয় মুহাম্মদকে ফিরিয়েই দিতে হলো মা আমেনার কাছে। এ সময় হঠাৎ মক্কায় মহামারী দেখা দেয়। তাই সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে শিশু মুহাম্মাদকে আবারো হালিমার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। 

হালিমার যেন খুশিতে আত্মহারা অবস্থা। এর কয়েকদিন পর ইসলামের ইতিহাসে সিনা চাকের ঘটনা হিসেবে খ্যাত অলৌকিক ঘটনাটি ঘটে।

মা আমেনা ও দাদা আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যু

এই ঘটনার পরই হালিমা মুহাম্মাদকে মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। এরপর ছয় বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি মায়ের সাথে কাটান। এই সময় আমিনা স্বামীর কবর জিয়ারত ও বাবার বাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে ছেলেকে নিয়ে মদীনায় যান। তিনি মদীনায় একমাস কাটান। একমাস পর মক্কায় ফেরার পথে আরওয়া নামক স্থানে এসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।

মায়ের মৃত্যুর পর দাদা আবদুল মোত্তালেব শিশু মুহাম্মাদকে নিয়ে মক্কায় পৌঁছেন। এর পর থেকে দাদাই মুহাম্মাদের দেখাশোনা করতে থাকেন। মোহাম্মদের বয়স যখন ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন তখন তার দাদাও মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তার পুত্র আবু তালিবকে মোহাম্মদের দায়িত্ব দিয়ে যান।

পাদ্রী বুহাইরার চোখে শিশু মুহাম্মদ

আবু তালিব ব্যবসায়ী ছিলেন এবং আরবদের নিয়ম অনুযায়ী বছরে একবার সিরিয়া সফরে যেতেন। মুহাম্মাদের বয়স যখন ১২ ব্ছর তখন তিনি চাচার সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্য বায়না ধরলেন। প্রগাঢ় মমতার কারণে আবু তালিব আর নিষেধ করতে পারলেননা। যাত্রাপথে বসরা পৌঁছার পর কাফেলাসহ আবু তালিব তাঁবু ফেললেন। 

কথিত আছে, শহরটিতে জারজিস সামে এক খ্রিস্টান পাদ্রী ছিলেন যিনি বুহাইরা বা বহিরা নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি তার গীর্জা হতে বাইরে এসে কাফেলার মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন। এ সময় তিনি বালক মুহাম্মাদকে দেখে শেষ নবী হিসেবে চিহ্নিত করেন। 

শৈশবেই  আত্মমর্যাদা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৈশব থেকেই ছিলেন পরম সত্যবাদী ও অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির। আল্লাহ তাঁকে সব ধরনের মানবিক, চারিত্রিক ও নৈতিক দুর্বলতা, স্খলন ও ত্রুটির ঊর্ধ্বে রেখেছেন। 

সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নবুয়ত-পূর্ব জীবন সম্পর্কে লেখেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতিপালন বিশেষ নিরাপদ ও কালিমামুক্ত পরিবেশে হয় এবং জাহিলিয়াতের নাপাক ও খারাপ অভ্যাসগুলো থেকে আল্লাহ তাঁকে সর্বদাই দূরে ও মুক্ত রাখেন। যাঁকে তার জাতিগোষ্ঠী প্রথম থেকেই সব চেয়ে বেশি প্রশংসনীয় গুণাবলি, উন্নত মনোবল, উত্তম চরিত্রের অধিকারী, লাজনম্র, সত্যবাদী, আমানতদার, কটূক্তি ও অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ থেকে দূরে বলে মনে করত। এমনকি তাঁর জাতির লোকেরা তাঁকে আমিন (বিশ্বস্ত) নামে স্মরণ করত।’ (নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা ১১৭)

শৈশব থেকেই স্বভাবগতভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) উচ্চ আত্মমর্যাদার অধিকারী। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘যখন কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছিল তখন নবী (সা.) ও আব্বাস (রা.) পাথর বয়ে আনছিলেন। আব্বাস (রা.) নবী (সা.)-কে বললেন, তোমার লুঙ্গিটি কাঁধের ওপর রাখো, পাথরের ঘষা থেকে তোমাকে রক্ষা করবে। (লুঙ্গি খুলতেই) তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। তাঁর চোখ দুটি আকাশের দিকে নিবিষ্ট ছিল। তাঁর চেতনা ফিরে এলো, তখন তিনি বলতে লাগলেন, আমার লুঙ্গি, আমার লুঙ্গি। তত্ক্ষণাৎ তাঁর লুঙ্গি পরিয়ে দেওয়া হলো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৮২৯)

শিশুকালেই আরবের লোকেরা তার মাধ্যমে কল্যাণ লাভ করা শুরু করে। আরবে দুর্ভিক্ষ চলছিল অনাবৃষ্টির কারণে। কোরায়েশরা বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে আবু তালেবের কাছে আবেদন জানাল। আবু তালেব একটি বালক সঙ্গে নিয়ে বের হলেন এবং কাবার ঘরের সামনে গিয়ে দোয়া দিলেন। বালক তার হাতে আঙ্গুল রাখলে সঙ্গে সঙ্গে আকাশে মেঘ এলো ও মুষলধারে বৃষ্টি হলো। সজীব উর্বর হয়ে গেল জমিন। আর সেই শিশুই ছিল শিশু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৭৫)

বাবু/মম
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত