সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে পটুয়াখালীর বদরপুর গ্রামের দেড় শতাধিক মুসলমান প্রথম রোজা ইফতারির মাধ্যমে সম্পন্ন করেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ১৪মিনিটের সময় পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরীপ হাফিজিয়া মাদ্রাসার নীচ তলায় বসে ইফতার করেছেন প্রথম রোজাদাররা। এরপর মাগরিবের নামাজ পড়ে সবাই বাড়িতে চলে গেছে।
এর আগে গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় প্রথম রোজা পালন করার উদ্দেশ্যে বদরপুর দরবার শরীপ জামে মসজিদে প্রথম তারাবি নামাজ আদায় করেন মাদ্রাসার ছাত্রসহ ওই গ্রামের প্রায় একশ মুসুল্লী। গতকাল রাতে তারাবি নামাজ পড়ান ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ মোঃ আল আমিন এবং হাফেজ মোঃ রেজাউল। মোট ১০রাকায়াত করে তারা দুইজনে মোট ২০রাকাত তারাবি নামাজ পড়ান বলে নিশ্চিত করেছেন সেখানকার জামে মসজিদের ইমাম আলহাজ্জ মাওলানা মোঃ আবদুল গনি।
প্রথম রোজার ইফতারীতে ছিল ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, পিয়াজু আর শরবত।
মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মোঃ আল আমিন জানান, আমি ২ বছর ধরে এখানে এসেছি। আসার পর থেকে সৌদির সাথে মিল রেখে এখানকার লোকজন ১দিন আগে রোজা রাখা শুরু করে আবার সে অনুযায়ী পবিত্র ঈদ ও কোরবানিও পালন করে। তিনি জানান, তার মাদ্রাসায় মোট ৩৪ জন ছাত্র আছে এরমধ্যে মোট ২৪ জন ছাত্র গতকাল রাতে তারাবি নামাজ পড়েছে, সেহরি খেয়েছে আর এখন ইফতার করছেন। বাকী ১০ জন ছাত্র নুরানি পড়ে তাদের বয়স অনেক কম তাই তারা রোজা রাখতে পারেনি।
৭৫ বছর বয়সি স্থানীয় আকন বাড়ীর আবদুল জব্বার আকন জানান, বদরপুর দরবার শরীপের পীর আবদুর রব বদরপুরী ৫০/৬০বছর আগ থেকে সৌদির সাথে মিল রেখে মূলত এ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। মুলতঃ আবদুর রব বদরপুরীসহ স্থানীয়রা সবাই ফুরফুরা শরীপের অনুসারী হলেও শুধু মাত্র সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে বাংলাদেশের সময় থেকে একদিন আগে রোজা রাখা শুরু করেন। সে হিসাবে ঈদ ও কোরবানীও একদিন আগে থেকে হয়ে থাকে।
বদরপুর জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ৬৫বছর বয়সি আঃ মন্নান আকন জানান, আবদুর রব বদরপুরীর মেয়ের জামাই মাওলানা জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানি বর্তমানে চাদপুর জেলার হবিগঞ্জের সাদরা এলাকায় বসবাস করছেন। তিনিও সেখানে আমাদের মতই একদিন আগে রোজা রাখেন। তবে সেখানে বৃহত্তর আকারে হয়ে থাকে। তিনি জানান, মূলতঃ আবদুর রব বদরপুরীর বাবা ওসমান গনি জীবিত অবস্থায় এপ্রথা চালু করে গেছেন। সেই থেকে বদরপুর গ্রামের মানুষ একদিন আগে রোজা রাখেন।
তিনি জানান, আমরা ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি আমাদের বদরপুরী পীর সাহেব ফুরফুরা শরীপের অনুসারী, আমরাও তারই অনুসারী। কিন্তু যেহেতু আমাদের পীর সাহেব একদিন আগে সৌদির সাথে মিল রেখে রোজা রেখেছে তাই আমরাও রাখছি।
মসজিদের খতিব কাম পেশ ইমাম আলহাজ্ব মাওলানা আঃ গনি জানান, আমি প্রায় ৪০/৪৫বছর ধরে এখানে আছি। সম্ভবত ৮০/৯০ বছর আগ থেকে এখানকার মুরীদরা সৌদির সাথে মিল রেখে এ প্রথা পালন করে আসছে। মুলত হানাফি মাযহাবি অনুসারীরা পৃথিবীর যেকোন স্থানে চাঁদ দেখা গেলে আর সেটি নিশ্চিত হলেই যেকোন মুসলমান রোজা রাখতে পারেন, পবিত্র ঈদ উদযাপন করতে পারেন। আমরাও আমাদের বদরপুরী পীর সাহেবের অনুসারী হিসাবে সেটিই করে আসছি।
বাবু/ এনবি