আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পাঁচটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে রয়েছে ৪টি পৌরসভা ও ৪৫টি ইউনিয়ন। আর সংসদীয় আসন সংখ্যা ৩টি। পুরুষ-মহিলা মিলে এ জেলায় ভোটার প্রায় ১২লাখ।
১৯৯১ থেকে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনে বিএনপির প্রার্থীরাই এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে এসব আসন আওয়ামী লীগের দখলে চলে আসে। সবশেষ বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলায় ৩টি আসনের মধ্যে বিএনপি বিজয়ী হয় দু’টি আসনে। পরে বিএনপির প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করায় উপ-নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল যেভাবে নির্বাচনী মাঠে নেমেছে, বিএনপি-জামায়াতকে সেভাবে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তবে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ভোটের হিসেব নিকেশ পাল্টে যেতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারনা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ)
চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনটি আসনের মধ্যে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১’ আসন শিবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় এই উপজেলাটি। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আসনটিতে বিএনপি থেকে ৩ বার ও আওয়ামী লীগ ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
এরমধ্যে ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত টানা ৩ বার বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া। এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুহাম্মদ এনামুল হক, ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোলাম রাব্বানি, সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। ভোটের মাঠে জনসমর্থন পেতে এখন থেকে মাঠে নেমে পড়েছেন তারা। তাদের মধ্যে রয়েছেন আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব জিল্লার রহমান ও শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানী।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসন থেকে শুধুমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিমুল এমপি নির্বাচিত হন। বাকি আসন দুটিতে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য না থাকায় জেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাচনের সময় হঠাৎ রাজনীতির মাঠে নামেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। জি. কে ফাউন্ডেশনের ব্যানারে মানুষদের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা শুরু করেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাপ শুরু করলে সফল হন। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে তিনি এক সভায় ‘জনগণ চাইলে এমপি নির্বাচন করবো’ বলে মতামত ব্যক্ত করেন।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ এনামুল হকের ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক। ইতোমধ্যে ভোটারদের নানান প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চেয়ে অন্তত সাড়ে ৩ শ’রও বেশি উঠান বৈঠক করেছেন। ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকর্মীদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- নৌকার মনোনয়ন নেওয়ার জন্য যা করা দরকার, তিনি করবেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানি। দীর্ঘদিন ধরে জনবিচ্ছিন্ন থাকায় ভোটাররা তার সাক্ষাৎ পায়নি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খবরে ভোটের মাঠে সরব তিনি। মানুষের সাথে নিয়মিত সাক্ষাৎ, চা-চক্রের পাশাপাশি তার এলাকার মানুষদের নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সম্প্রতি কানসাটে তিনি এক বিশাল জনসভা করে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা বলেন।
অন্যদিকে, শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপি দলটির নাম ওঠলে মানুষের মনে সবার প্রথমে শাহজাহান মিয়ারই নাম আসে। বিএনপি থেকে টানা তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া। বলা হচ্ছে, বিএনপি নির্বাচনে আসলে তিনিই হবেন এই আসনের ধানের শীষের প্রার্থী। কিন্তু এই দলেরই রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকতের নাম শোনা যাচ্ছে, তিনি দলীয় মনোনয়ন-প্রত্যাশী। তার বাড়ি শিবগঞ্জ পৌর এলাকায় হলেও তিনি এলাকায় সেভাবে পরিচিত নন।
আওয়ামী লীগ-বিএনপি এখন পর্যন্ত দলীয় প্রার্থী ঘোষণা না করলেও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এ আসনের দলীয় প্রার্থী হিসেবে ড. কেরামত আলীর নাম ঘোষণা করেছেন। তিনি রাজশাহী মহানগরের জামায়াতের আমির।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, ‘এ আসনে আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর গত চার বছরে স্কুল-কলেজ নির্মাণসহ এলাকার প্রচুর উন্নয়ন করেছি। সাধারণ মানুষেরও আমার প্রতি আগ্রহ আছে, ব্যাপক জনসমর্থনও পাচ্ছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৬ হাজার ৫৪ জন, পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১২ হাজার ৩৮৯ জন, নারী ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৩ হাজার ৬৬৫ জন। আসনটিতে একটি উপজেলা ও একটি পৌরসভা রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট)
আগামী বছর অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট মোট ৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই সংসদীয় আসন। এখানকার রাজনীতিতে বরাবরই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জমজমাট লড়াই হয়। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচনে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও, তাদের রাজনৈতিক অবস্থান তৃণমূল পর্যায়ে তেমন একটা চোখে পড়ে না।
২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করে তাহলে এই আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মূল লড়াই হবে তাদেরই।
আওয়ামী লীগ-বিএনপির দল দুইটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। ফলে তৃণমূলে তাদের অবস্থা একেবারেই নড়বড়ে। যদিও আসনটির আওয়ামী লীগের জন্য আঁতুড়ঘর গোমস্তাপুর উপজেলা। আওয়ামী লীগের এখন পর্যন্ত যত নেতা ভোটের মাঠে থাকেন অধিকাংশই গোমস্তাপুর উপজেলারই বাসিন্দা। অন্যদিকে বিএনপির ভোট বেশি ভোলাহাট উপজেলায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একবারও আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়নি। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবকটি নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন। টানা তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জিয়াউর রহমান ও গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস জয়ী হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আমিনুল নির্বাচিত হলেও দলীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করায় উপ-নির্বাচনে জয়ী হন জিয়াউর রহমান। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। তারা সবাই মনোনয়ন প্রত্যাশী।
ইতোমধ্যে অনেকেই বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন টাঙিয়ে বিভিন্ন দিবসের শুভেচ্ছা বার্তা জানাচ্ছেন। গেল উপ-নির্বাচনে চিত্রনায়কা মাহিয়া মাহি সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন তুলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। আসন্ন নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন।
আওয়ামী লীগ থেকে যারা মনোনয়ন চাইবেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খুরশিদ আলম, আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার, রফিকুল আলম সৈকত জোয়ার্দার ও চিত্রনায়কা শারমিন আক্তার নিপা ওরফে মাহিয়া মাহি।
সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান শিক্ষাজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি গোমস্তাপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।
২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস। বর্তমানে তিনি গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
গোমস্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছিলেন খুরশিদ আলম ওরফে বাচ্চু। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে শুরু থেকে জড়িত নন, বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদে রয়েছেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম, মহিলা দলের নেত্রী মাসউদা আফরোজ হক (শুচি) ও বিএনপি নেতা বাইরুল ইসলাম। চাঁপাইনাববগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি বিএনপির কোনো পদে নেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য ও গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাইরুল ইসলাম। তিনি ভোটের মাঠে খুব সরব কিন্তু সেটা তারই উপজেলায়।
আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে নৌকা প্রতীককে জয়ী করার টার্গেট থাকবে সবার।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী চিত্রনায়কা মাহিয়া মাহি বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন দলের যে কেউ চাইতে পারেন।
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ভোটের মাঠে আছি, থাকবো। মহিলা দলের মাসউদা আফরোজ হক শুচি বলেন, ‘দল নির্বাচনে এলে অবশ্যই মনোনয়ন পত্র তুলবো। দল আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে আমার উপর ভরসা রাখবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতের ভোটার সংখ্যা একেবারেই কম। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মীম ওবাইদুল্লাহ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হলে আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী হবেন ড. মিজানুর রহমান। তিনি একটি কলেজের অধ্যাপক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১ হাজার ১৭০ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ২৮০ জন। এই আসটিতে তিনটি উপজেলাসহ দুটি পৌরসভা রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর)
আগামী বছর অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই সংসদীয় আসন। এখানকার রাজনীতিতে বরাবরই আওয়ামী লীগ,বিএনপি ও জামাতের জমজমাট লড়াই হয়। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচনে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও, তাদের রাজনৈতিক অবস্থান তৃণমূল পর্যায়ে তেমন একটা চোখে পড়ে না।
২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করে তাহলে এই আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মূল লড়াই হবে তাদেরই। আওয়ামী লীগ-বিএনপির দল দুইটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। ফলে তৃণমূলে তাদের অবস্থা একেবারেই নড়বড়ে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একবারও আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়নি। ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতায়াত প্রার্থী লতিফুর রহমান ও তার নিকটতম বিএনপি প্রার্থী ছিলেন মৃত সুলতানুল ইসলাম মনি। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী ও বর্তমানে দলটির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশিদ। টানা তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ জয়ী হন।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে আবারো বিএনপির প্রার্থী হারুনুর রশিদ নির্বাচিত হলেও দলীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করায় উপ-নির্বাচনে জয়ী হন নৌকা প্রার্থী আব্দুল ওদুদ। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে পুরনো প্রার্থী হিসেবে আব্দুল ওদুদ মনোনয়ন পাবেন বলেও আশা করছেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে যারা মনোনয়ন চাইবেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, স্বাচিপ জেলা শাখার সভাপতি ডা. গোলাম রাব্বানী। এদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সম্প্রতি উপনির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সামিউল হক ওরফে লিটন। তিনি অল্প ভোটেই পরাজিত হয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনে তিনি আবারো অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে বিএনএফ মনোনীত প্রার্থী কামরুজ্জামান খান আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে। বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ, রফিকুল ইসলাম। জামায়াত ভোটে অংশগ্রহণ করলে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন বুলবুল ইসলাম। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (আপেল প্রতীক) হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে নৌকা প্রতীককে জয়ী করার টার্গেট থাকবে সবার। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন শুধু আমি চাইবো না, আরও অনেকেই চাইবে। সুতরাং দল যেটা সিদ্ধান্ত নেবে সেটা মেনে নিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করে যাবো’।
সদর আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১১ হাজার ৪৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১ হাজার ১৭০ জন এবং নারী ২ লাখ ৪ হাজার ২৮০ জন।
বাবু/এ আর