কর্ণফুলী নদীতে প্রচুর পরিমাণে শেওলা জমে থাকায় চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি উৎপাদন মারাত্মক ভাবে ব্যহত হচ্ছে। ফলে গ্রীষ্মের তাপদাহের মাঝে চট্টগ্রাম নগরীতে চলমান পানি সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হলে আশু এই পানি সংকট দূর হবে না বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
এই পানি সংকটের মাঝে দফায় দফায় বিদ্যুতের লোডশেডিং এর কারণে বিদ্যুৎ চালিত পানির পাম্প চালাতে না পারায় বাসা বাড়ির ওভারহেড ট্যাংকে পানি তুলতে পারছে না। যেসব বহুতল এপার্টমেন্ট ভবন নিজস্ব ডিপ টিউবেলের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে থাকে সেসব বেশির ভাগ ভবনের রিজার্ভার এখন পানি শূন্য। এই পানি সংকটের সাথে বিদ্যুতের লোডশেডিংকে নগরবাসী অনেকটা 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' হিসেবে মনে করছেন।
চলতি গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হতেই পানি সংকটে বিপর্যস্ত চট্টগ্রাম নগরবাসী। আশানুরূপ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং কাপ্তাই লেকে পানির স্থর নীচে নেমে যাওয়ার ফলে বাঁধ দিয়ে পর্যাপ্ত পানি না ছাড়ার ফলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধানতম পানি উৎস কর্ণফুলী নদীর পানিতে লবনাক্ততা দেখা দেয়। তবে সম্প্রতি সেই সমস্যা অনেকটা উন্নতি হলেও এখন ওয়াসার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কর্ণফুলী নদীর পানিতে থাকা বিপুল পরিমাণের শেওলা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদুল আলম রবিবার (১৬ এপ্রিল) বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, ‘কর্ণফুলীর পানিতে এই শেওলা আগে কখনোই দেখা যায়নি। শেওলার কারণে আমাদের পানি শোধনাগারের ফিল্টার ব্লক হয়ে যাচ্ছে ফলে পানি উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি শোধনাগার স্বচল রাখতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। নিজস্ব বিকল্প ব্যবস্থা থাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং এর কারণে চট্টগ্রাম ওয়াসার তেমন সমস্যা হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, ‘আমরা চট্টগ্রামে নতুন পানি শোধনাগার চালুর পর থেকে গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু গ্রীষ্ম মৌসুম ও পবিত্র রমজান মাস হওয়ায় নগরীতে পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়া। আমাদের প্রধান দুটি পানি শোধনাগারের জন্য কর্ণফুলী নদী থেকে পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় উৎপাদন ও সরবরাহে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে৷’
শনিবার (১৫ এপ্রিল) ওয়াসার সক্ষমতার হিসেবে পানির উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এখনকার দৈনিক পানির চাহিদা ৪৬ থেকে ৪৭ কোটি লিটার। তবে এই মূহুর্তে আমরা সরবরাহ করতে পারছি ৩৫ থেকে ৩৬ কোটি লিটার। সেই হিসেবে ১০ কোটি লিটার পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওয়াসা রেশনিং পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ করছে বলে তিনি জানান।
চট্টগ্রাম ওয়াসা কী আবারও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের দিকে ঝুঁকছে? এই প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদুল আলম বলেন, ‘নগরীর যেসকল পকেট এরিয়াতে আমরা এখনো পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ রিকোভার করতে পারিনি সেসব এলাকাতে পানি সরবরাহ বাড়াতে গভীর নলকূপ স্থাপন করতেই হচ্ছে।’ সম্প্রতি নগরীর আকবর শাহ্ এলাকার কৈবল্যধামে হাউজিংয়ে নতুন আরও একটি নলকূপ বসানোর কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। শিগগিরই সেই নলকূপটি চালু হলে দৈনিক পানি উৎপাদন হবে প্রায় ২৪ লাখ লিটার। তবে সেখান থেকে উত্তোলিত সবগুলো পানি ওই আবাসিকে সরবরাহ করা হবে বলে জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদুল আলম। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীতে সামগ্রিকভাবে পানির সরবরাহ পরিস্থিতির দ্রুত স্বাভাবিক সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করি তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নগরবাসীকে পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে এবং সাময়িক কষ্ট স্বীকার করে নিরবিচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ নিশ্চিতের লক্ষ্যে সকলের সহায়তা চেয়েছেন।
এদিকে শনিবার (১৫ এপ্রিল) চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের ২৩০ কেভির বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারে (সিটি, সাবস্টেশন) অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে করে চট্টগ্রামের বড় একটি অংশ কার্যত বিদ্যুতহীন হয়ে পড়ে। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে এ আগুন লাগার ঘটনার পর নগরীর কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলেও বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম। আগুনে বড় ধরনের কোনও ক্ষতি হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ট্রান্সফরমারে শর্ট সার্কিটের কারণে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। স্বাভাবিকভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এ ধরনের বৈদ্যুতিক গোলোযোগ হতে পারে।’
যদিও বিদ্যুৎ বিভাগ চট্টগ্রামের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে বলে দাবি করেছেন। কিন্তু চলতি গ্রীষ্মের শুরু থেকে ধারাবাহিক ভাবে চলা লোডশেডিং শনিবার থেকে আরও বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ নগরবাসী। নগরীর বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী প্রায় প্রতিটি এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ ঘন্টা লোডশেডিং হচ্ছে। আর এই লোডশেডিং এর কারণে পানি পাম্প চালাতে না পারায় বাসাবাড়ি গুলোতে পানি সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ করেছে বাসিন্দারা।
বাবু/জেএম