তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে জোড়া খুনের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ফয়সালকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন -৭ (র্যাব)।
বৃহস্পতিবার (১১মে) ভোর চারটায় চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকার একটি বাসা বাড়িতে র্যাব-৭ অভিযান চালিয়ে জোড়া খুনের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আসামী মোঃ ফয়সালকে গ্রেফতার করেন। ফয়সাল নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানা এলাকার জনৈক মো: নূর নবীর ছেলে।
র্যাব-৭ এর সিনিঃ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নুরুল আবছার বাংলাদেশ বুলেটিনকে ফয়সাল আটকের খবরটি নিশ্চিত করে বলেন, এই জোড়া খুনের ঘটনায় আটককৃত ৮ জনের মধ্যে ৪ জনই বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন এবং সকলের জবানবন্দীতে জোড়া হত্যার ঘটনায় ফয়সালের পূর্বপরিকল্পনার কথা সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশ হয়। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ফয়সালকে গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারী ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আত্মগোপনে থাকা ফয়সালের হদিস পেয়ে তাকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সাল চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডার মামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলো বলে অকপটে স্বীকার করে। একই সাথে বেরিয়ে আসে বিটাক বাজার এলাকায় সংঘটিত জোড়া খুনের নেপথ্যের ঘটনা
ঘটনার সূত্রপাত : আদালতে আসামীদের দেয়া জবানবন্দি ও এই মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং সর্বিশেষ গ্রেফতার ফয়সাল র্যাব-৭ কে দেয়া তথ্য থেকে পরিষ্কার হওয়া গেছে এই জোড়া খুনের বিস্তারিত ঘটনা প্রবাহ ৷ গত ০৮ মে সন্ধ্যা ৭ টায় চট্টগ্রামের সাগরিকা জহুর আহমদ স্টেডিয়াম এলাকায় নিহত ভিকটিম মাসুমের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম শিহাব তার বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরতে যায়। ওই সময় শিহাবকে উদ্দেশ্য করে ফয়সাল ও রবিউল বলে, ‘ওই মেয়ের সঙ্গে তোকে মানায়নি’ এবং মেয়েটিকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করা শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে সামান্য মারামারিও হয়। ঐ সময় ফয়সাল ও রবিউলরা আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং বিষয়টি তাদের বড় ভাই ইলিয়াছ মিঠুকে জানায়।
কারা কিভাবে জোড়া খুনের ঘটনাটি ঘটালো : মূলত হত্যার ঘটনায় যারা অংশ নিয়েছেন তাদের সবার বয়স ১৬ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে এবং সবাই কিশোর। পাহাড়তলীর কথিত বড় ভাই শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ মিঠুর অনুসারী এসব কিশোর ও তরুণরা চলাফেরা করত বন্ধুর মত। ইলিয়াছকে সবাই বড় ভাই বলে সম্বোধন করত। ইলিয়াস সাবেক প্যানেল মেয়র ও বর্তমান স্থানীয় কাউন্সিলর নেছার আহমেদ মঞ্জুর অনুশারি৷ সাগরিকা শিল্প এলাকা থেকে পুরো কাট্টলী এলাকার মিল কারখানা গুলোতে একক ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতো ইলিয়াস৷ আর নিজের দাপট ধরে রাখতে ইলিয়াস একাধিক কিশোর গ্যাং কে লালন করে। ফয়সাল ও রবিউলরা বড় ভাই ইলিয়াছ মিঠুকে শিহাবের বিষয়টি জানালে ঐদিন রাত ৮ টার দিকে সিরাজুল ইসলাম শিহাবকে ফোন করে ইলিয়াস বলে, বিষয়টি মীমংসা করতে হবে এজন্য তার অফিসের আসতে বলে। ইলিয়াসের কথামত সরল বিশ্বাস নিয়ে এ সময় শিহাবের সাথে বন্ধু মাসুম, সজীব, ফাহিম, রোকন, রজিন, তুহীন, মেহেদী হাসান, ইউসুফ ও প্রান্তসহ ইলিয়াসের অফিসে যায়। সেখানে আগে থেকেই ইলিয়াসের নির্দেশে ও ফয়সালের পূর্বপরিকল্পনায় রবিউলসহ প্রায় ২০/২৫ জন উঠতি বয়সী কিশোর ছেলে দেশীয় ধাড়ালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ওঁৎ পেতে থাকে যা শিহাব ও তার সাথে থাকা বন্ধুরা জানতো না। সেখানে আসার পর উভয় পক্ষ কথা কাটাকটি এবং কথার একপর্যায়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সে সময় বড় ভাই ইলিয়াছ মিঠু, ফয়সাল এবং রবিউলকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘শালাদের মার’। ইলিয়াসের নির্দেশে এবং ফয়সালের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রবিউল ও তার অনুসারীরা কাঠের বাটাম দিয়ে মাসুমদের বেদড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে মাসুম ও সজীবকে একাধিক ছুরিকাঘাত করে ফয়সাল, রনি ব্রো, বাবু এবং আকাশ। আহত মাসুম ও সজীবের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ইলিয়াস, ফয়সাল এবং রবিউলসহ অন্যান্যরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন মাসুম ও সজীবকে রক্তাক্ত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর জোড়ার খুনের ঘটনায় নিহত ভিকটিম সজীবের বড় ভাই বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহনগগরীর পাহাড়তলী থানায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০/১২ জনকে অজ্ঞাতনামা করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।