সরেজমিন সীতাকুণ্ড পৌরসভার মহাদেবপুর ইকোপার্ক এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অংশে দেখা গেছে, এখানের পূর্ব পাশে অবস্থিত সাব প্লাস সিএনজি স্টেশনের সামনের অংশ ঘেঁষে থাকা ছড়াটির অন্তত ৫০ ফুট অংশ বালি ও রাবিশ (ইট, সুরকির টুকরো) ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে দক্ষিণ দিকে বয়ে গেছে।
যে জমিতে যাতায়াতের জন্য জোর জবরদস্তি রাস্তা বানানো হচ্ছিলো সেই জমিতে “পলিইকো রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ” নামক একটি সাইনবোর্ড দেখা গেছে। সেই সাইনবোর্ডে দেয়া মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল দেয়া হলেও কেউ রিসিভ করেনি। ভরাট করা ছড়াটি প্রায় দেড় কিলোমিটার বয়ে চলার পর একটি শাখা খালে গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে।
এসময় সেখানে উপস্থিত একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বাংলাদেশ বুলেটিন প্রতিনিধিকে অভিযোগ করে বলেন, এসব কি দেখার কেউ নাই? ভরাট করা পানি চলাচলের রাস্তাটি দিয়ে পৌরসভার মহাদেবপুর, ফকিরহাট, ঢালিপাড়া, সিরাজ ভূঁইয়া রাস্তার মাথা, দক্ষিণ রহমত নগর, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কসহ দুটি হিন্দুপাড়ার পানি চলাচল করে।
রাতের আঁধারে এই রাস্তা নির্মাণ করতে ছড়ার পাশের এক প্রবাসী মোঃ শাহজাহানের মালিকার সাড়ে উনিশ শতক কৃষি জমিও ভরাট করে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রবাসীর স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৭-৮ কে বিবাদি করে অতিঃ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, চট্টগ্রাম (উত্তর) এর আদালতে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ৪৩২/২০২৩ইং)। প্রবাসীর স্ত্রী হোসনে আরা বেগম জানান, স্থানীয় হোসেন নিজামীর ছেলে আলা উদ্দিন, হিয়াস উদ্দিন ও সোহাগ উদ্দিন দীর্ঘদিন যাবত আমার স্বামীর কষ্ঠার্জিত অর্থে কেনা জমি হাতিয়ে নিতে নানান ভাবে পায়তারা করে আসছে। সর্বশেষ স্থানীয় জাহিদ নামের এক ব্যক্তি আমাকে স্বামীকে বুঝিয়ে জমি হস্তান্তরের জন্য হুমকি ধমকি প্রদান করে আসছে। আমার স্বামী স্বেচ্ছায় জমি না দিলে তারা ঘুমের মধ্যে রাস্তা বানিয়ে ফেলবে বলেও হুমকি দেয়। শেষ পর্যন্ত তারা রাতের অন্ধকারে আমার স্বামীর কেনা জমিতে বালি ও রাবিশ ফেলে রাস্তা বানানোর কাজ শুরু করে দেয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে লাগোয়া জায়গাটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের। এই অবৈধ ভরাট নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করলেও সওজ তাদের জমি ও মহাসড়ক রক্ষায় কোন ভূমিকা পালন করছেনা।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাছে হোসেন নিজামীর ছেলেরা একটি জমি বিক্রি করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু সেই জমিতে যাতায়াতের কোন রাস্তা নেই। এখন ক্রেতাকে রাস্তা সহ জমিগুলো বুঝিয়ে দিতেই রাতের বেলা পানি চলাচলের পথ দখল করে অন্যের ব্যক্তিমালিকানার জমিতে বালি ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এই ভরাটের কারণে চলতি বর্ষায় ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেবে বকে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে আশপাশের একাধিক গ্রামের কৃষি জমির সেচ ব্যবস্থাও হুমকিতে পড়বে।
স্থানীয়রা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই পানি বন্ধের মাধ্যমে আমাদের আবাদি জমিকে অনাবাদি জমিতে পরিণত করার চক্রান্ত করা হয়েছে। আমরা যদি চাষাবাদ করতে না পারি তাহলে জমিগুলো আমাদের আর কোন কাজেই আসবে না। দেখা যাবে সিন্ডিকেটটি সেই সময় আমাদের পূর্বপুরুষের জমিগুলো বিক্রি করে দিতে বাধ্য করাবে।
ভরাট করা ছড়াটি দিয়ে আশপাশের সব গ্রামে পানি প্রবাহিত হয় বলে নিশ্চিত করে মুরাদপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন জানান, এখন এভাবে ভরাটের কারণে পানি চলাচলের কোন পথ থাকবে না। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। সীতাকুণ্ড পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দিদারুল আলম এ্যাপোলো বলেন, ইকোপার্ক ছড়ার পানি প্রবাহের একমাত্র ছড়াটি ভরাটের বিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ জায়গাটি পরিদর্শন করেছি। মহাসড়কের পাশে পানি চলাচলের পথ দখল করে রাস্তা তৈরির কোনো সুযোগ নেই।
জানতে চাইলে সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, “আমি ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং তাৎক্ষণিক ভরাট কাজ বন্ধ করেছি। উভয়পক্ষকে ডেকে পাঠিয়েছি। পানি চলাচলের পথ বন্ধের কোনো সুযোগ নেই।”
সরকারি এর জায়গায় পানি চলাচলের পথ ভরাটের ঘটনায় কেন কথিত দুই পক্ষকে ডাকতে হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি চেয়েছি তাদেরকে দিয়েই ভরাট করা জায়গাটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। ইতিমধ্যে এতোদিন পেরিয়ে যাওয়ার পর আর কতদিন অপেক্ষা করবেন এমন প্রশ্ন করতে তিনি আর অপেক্ষা করা হবে না জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, “১৮ মে আমি ভরাট অপসারণে অভিযানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম৷ কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি৷” তবে আগামী সোমবার (২২মে) তিনি অভিযান পরিচালনা করবেন বলে জানান।
তিনি আরো বলেন, সেখানে থাকা বালি ও অন্যান্য সামগ্রী তাৎক্ষনিক নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে অপসারণ করা হবে। একই সাথে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন।
এই সিন্ডিকেটে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় শেষ পর্যন্ত অভিযান চলবে কিনা এ নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে স্থানীয়রা। যারা অবৈধ ভরাট করেছে তারা সবাইকে ম্যানেজ করে একের পর এক অপকর্মের জন্ম দিলেও আজ অব্দি কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নজির না থাকায় এই শঙ্কা বলে জানান স্থানীয়রা। তবুও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতি সম্মান রেখে আগামী ২২ মে সোমবার এই অবৈধ ভরাট উচ্ছেদ ও দোষিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা দেখার অপেক্ষা থাকবেন বলে জানান তারা।
এই ভরাট ও দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সোহাগ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনাটি সম্পর্কে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে তার মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোন সাড়া দেননি।