শিল্প নগরী টঙ্গীতে আশঙ্কাজনক হাড়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডেঙ্গু বিশেষায়িত টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৬ জন রোগী। এদের মধ্যে ১৮ জন পুরুষ ৮ জন নারীসহ মোট ২৬জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া ২০জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
হাসপাতালের তথ্য মতে, গত ১০ জুলাই এক দিনে ভর্তি হয়েছেন নারী পুরুষ মিলিয়ে ৮জন রোগী। স্থান সংকুলানের কারনে সাধারণ রোগীদের সাথে রেখেই চলছে চিকিৎসা সেবা। এতে সাধারন রোগীদের মাঝেও ডেঙ্গু সংক্রমনের আশংকা বাড়ছে। অপরদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারি ভাবে নেই কোন জনসচেতনতা মূলক প্রচার প্রচারনা। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি দৃশ্যমান কোন কার্যকর প্রদক্ষেপ। ঔষধ না থাকায় বন্ধ রয়েছে মশক নিধন কার্যক্রম। এতে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরেছেন টঙ্গী সহ গাজীপুরের নগরবাসী।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ঐতিহাসিক কহর দরিয়ার পাড়ে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম এই সিটি কর্পোরেশনের শিল্প অধ্যুষিত ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা টঙ্গী। এই অঞ্চলের টঙ্গী বাজার, স্টেশন রোড, মধুমিতা, আরিচপুর, মরকুন, শীলমুন, পাগার, অউচ পাড়া, দত্তপাড়া, সাতাইসসহ বিভিন্ন এলাকায় জনসচেতনতার অভাবে যত্রতত্র নালা, ডোবা, বদ্ধ জলাশয়, বাসা বাড়ির ছাদবাগান, নির্মাণাধীন ড্রেন ও দালান কোটায় বৃষ্টির পানি জমাট বেঁধে প্রজনন হচ্ছে ভয়ঙ্কর এডিস মশার লার্ভা। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নেওয়া হয়নি বিশেষ কোন ব্যবস্থা।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের শাসনামলে মশক নিধনের জন্য উন্নত প্রযুক্তির ফগার মেশিন ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ‘ভেহিকেল মাউন্টেইন’ ফগার মেশিন ক্রয় করে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা হয়েছিল ‘ডেন্টাসাইড ২৫০’ নামক মশার ঔষধ। জাহাঙ্গীরের বহিস্কারের পর মূলত থমকে যায় মশক নিধন কার্যক্রম। এরপর গত বছর নগড় কর্তৃপক্ষ মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করলেও ঔষধ সল্পতায় তা বেশি দিন চলেনি। স্থানীয় কাউন্সিলরদের দাবি ঔষধ সরবরাহ না থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে মশক নিধন কার্যক্রম।
বিশ্লেষকদের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরী বিষয় হচ্ছে জনসচেতনতা। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্ভব। এছাড়া এখন অনেক জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে যা বৃষ্টির সাথে সম্পৃক্ত নয়। বহুতল ভবনের পার্কিং, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, ওয়াসার মিটারবক্স ও বাসা বাড়িতে জমিয়ে রাখা পানিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে মশার প্রজনন বন্ধ করার কোন বিকল্প নেই। পানি জমতে পারে এমন কোন অবস্থা যাতে তৈরি না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। সব ধরনের ডাবের খোসা, গাড়ির পরিত্যাক্ত টায়ার, ভাঙ্গা বোতল, পরিত্যাক্ত ফুলের টব ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এসব করা সম্ভব নয়। বাঁচতে হলে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে এসব করতে হবে।
এ বিষয়ে শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হঠাৎ করে ঈদ পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে ইতিমধ্যে ৪৫ জন রোগীকে অমরা সেবা দিয়েছি তাদের মধ্যে ২০জন রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। বাকিরা চিকিৎসাধীন আছেন। ডেঙ্গু মোকাবেলায় আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন আছে। ইতিমধ্যে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরিক্ষার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আগামী এক মাস এই সেবা চালু থাকবে। রোগীদের সাবির্ক অবস্থা ভাল আছে। পরিস্কার পরিচ্চন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করে বেশী পরিমান তরল খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম শফিউল আজম বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি এরিয়া ১০ ভাগে বিভক্ত করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রত্যকটি ওয়ার্ডে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মাইকিং করা হচ্ছে। যেহেতু টঙ্গী এলাকা একটু ঝুঁকিপূর্ণ তাই বিশেষ নজড়ে রাখা হয়েছে।
বাবু/জেএম