সোমবার ২৩ জুন ২০২৫ ৯ আষাঢ় ১৪৩২
সোমবার ২৩ জুন ২০২৫
খুলনা নগরীতে প্রবেশে দুর্ভোগ চরমে
সৈকত মো. সোহাগ, খুলনা
প্রকাশ: রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩, ১১:৩৬ AM
খুলনা মহানগরীতে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সড়কের দশা বেহাল। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এসব সড়ক। এছাড়া চলতি বর্ষা মৌসুমে অবস্থা আরও নাজুক। ফলে প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। চালক ও পথচারীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। সড়কগুলো হচ্ছে- রূপসা সেতু থেকে শিপইয়ার্ড হয়ে ট্রাফিক মোড়, মোস্তফার মোড় থেকে রায়েরমহল স্লুইস গেট পর্যন্ত এবং শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল সংযোগ সড়ক।

গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি সড়ক খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), খুলনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) আওতাধীন।

সরেজমিনে দেখা যায়, খুলনা শহরে অন্যতম প্রবেশদ্বার মোস্তফার মোড় থেকে রায়েরমহল সুইস গেট পর্যন্ত সড়ক খানা-খন্দে ভরে থাকার কারণে ঝুঁকি নিয়ে হেলে দুলে চলতে হচ্ছে ইজিবাইক, বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কারসহ সব ধরনের যানবাহনকে। শুধু এই সড়কটি নয়, খুলনা নগরে প্রবেশের আরও দুটি রূপসা সেতু থেকে শিপইয়ার্ড হয়ে ট্রাফিক মোড় পর্যন্ত সড়কে উন্নয়ন কাজ চলছে ধীর গতিতে এবং শহর বাইপাস থেকে শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল সংযোগ সড়ক এখন সম্পূর্ণ কাঁচা সড়কে পরিণত হয়েছে।

খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) জানায়, শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদেও নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় ২০১৩ সালের ৭ মে। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজ শুরু হয় না। এরপর প্রকল্প সংশোধন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ২০২০ সালের ২১ জুলাই প্রথম সংশোধিত প্রকল্প ফের একনেকে অনুমোদন হয়। তখন প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। এরপর দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিতে পেরিয়ে যায় আরও দেড় বছর। ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আতাউর রহমান লিমিটেড অ্যান্ড মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডকে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) কার্যাদেশ দেয় কেডিএ। ২০ জানুয়ারি কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু শুরুর পর নানা অজুহাতে কয়েক দফায় কাজ বন্ধ রাখে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ফলে এ কাজের এখন পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫৪ শতাংশ। মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে।

খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্প কর্মকর্তা (নির্বাহী প্রকৌশলী) মো. আরমান হোসেন ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার কাওছার আহমেদ বলেন, বিভিন্ন সরঞ্জামের মূল্য বৃদ্ধি, বর্ষা মৌসুমে কাজ করতে না পারায় শিপইয়ার্ড সড়ক নির্মাণ কিছুটা ধীরগতিতে চলছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে জন-ভোগান্তি লাঘব হবে। এদিকে শহরের বাইপাস সড়কের মোস্তফার মোড় থেকে রায়েরমহল পর্যন্ত যুক্ত সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় দুই বছর ধরে খানা খন্দ আর বড় বড় গর্তে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্ষায় মালবাহী ট্রাক খাদে গিয়ে আটকা পড়ে। এছাড়া ছোট-খাট পরিবহনগুলো সাধারণত সড়কটি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। তবে সড়কের পাশে দুটি বিদ্যালয় থাকায় শিক্ষার্থীদের বিপাকে পড়তে হয়।

ট্রাক চালক শেখ নুর ইসলাম জানান, বড় বড় খানা-খন্দে বর্ষার পানি জমে জলাশয়ে রূপ নেয়। ট্রাক এসে অনেক সময় গর্তে আটকে পড়ে। এছাড়া ছোট যানবাহন প্রায় উল্টে পড়ে। ব্যবসায়ী মহিদুল ইসলাম বলেন, সড়কের করুণ অবস্থা । ব্যবসায়িক মালামাল আনা-নেওয়া যায় না। ফলে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। অন্যত্র গিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে। বেহাল এই সড়কটি খুলনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিপ্তরের।

খুলনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম আনিসুজ্জামান এ ব্যাপারে বলেন, সড়কটি মেরামতে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ঠিকাদার চূড়ান্ত হলে শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

আবার সিটি বাইপাস থেকে শেখ আবু নাসের হাসপাতাল পর্যন্ত সংযোগ সড়কটির অবস্থা সব থেকে বেহাল। ২০০৯ সালে এ সড়কটি খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করে। একযুগে একবারও সংস্কার হয়নি সড়কটি। খালিশপুর-দৌলতপুর আঞ্চলের মানুষের দ্রুত শহরের বাইরে বের হওয়ার জন্য সড়কটি নির্মাণ করা হলেও তা মোটেও কাজে আসছে না।

সবুজ নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, এক সময় ছিল পাকা রাস্তা, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় পিচ ঢালাই সড়ক এখন মাটির সড়কে পরিণত হয়েছে। সড়কের পিচ উঠে মাটির সড়ক হয়েছে। এখন আর বোঝার উপায় নেই এখানে এক সময় পাকা রাস্তা ছিল। বর্তমান অবস্থা এতটাই খারাপ যানবাহন তো দূরের কথা পথচারীও হেঁটে যাতায়াত করতে পারছে না।

এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, পরিবারের নানা সুবিধার কথা চিন্তা করে এই সড়কের পাশে বাসা ভাড়া নিয়েছিলাম। কিন্তু রিকসা ও ইজিবাইকও আসতে চায় না এ সড়কে। কেউ রাজি হলেও দুই-তিন গুন ভাড়া বেশি চায়। এ অবস্থায় বাসা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ সড়কের আবু নাসের মোড় থেকে ব্রীজ পর্যন্ত খুলনা সিটি কর্পোরেশন এবং বাকিঅংশ খুলনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী-৩ শেখ মোহাম্মদ মাসুদ এ সড়কটি সম্পর্কে বলেন, কর্পোরেশনের অংশের সড়কটি নির্মাণে প্রকল্পে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনুমোদন মেলেনি।

খুলনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম আনিসুজ্জামান বলেন, ওই সড়কের এলজিইডির আইডি পড়েনি। সুতরাং আইডি না থাকলে আসলে কিছু করার থাকে না। আইডির আওতায় আসতে সময় লাগবে।

বাবু/জেএম
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত