ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় আসাদুজ্জামান আসাদ(৩২) নামের এক যুবলীগ কর্মীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এসময় নাহিদ নামের আরেক যুবক আহত হয়েছে। সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে শহরের আটানী বাজারে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার প্রতিবাদে ও খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার দাবিতে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কে নিহতের লাশ রেখে বিক্ষোভ করেছে ক্ষুব্দ নেতাকর্মী ও নিহতের স্বজনরা।
এসময় বিকাল ৫টা ২০ থেকে এক ঘন্টা ব্যাপী সড়ক অবরোধ করে রাখে। পুলিশ এ ঘটনায় রাজিব হোসেন(৩০), শহিদুল ইসলাম(৪০) ও সামিউল ইসলাম খোকন(২৪) নামের ৩ জনকে আটক করেছে। নিহত আসাদ উপজেলার তারাটী পূর্বপাড়া গ্রামের শামসুল হকের ছেলে এবং প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হামিদ নায়েবে ভাতিজা। সে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ গ্রুপে যুব লীগের সক্রিয় কর্মী ছিল বলে নিহতের চাচাত ভাই কাজী আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাতে শহরের আটানী বাজারে একটি চায়ের দোকানে বসে আসাদ, নাহিদসহ কয়েকজন মিলে এক সাথে বসে চা পান করছিল। পৌনে ৯টার দিকে ১৫/২০জনের একদল যুবক চাইনিজ কুড়াল, রড, হকিস্টিকসহ অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। এসময় তারা উপর্যুপুরি কুপিয়ে ও পিটিয়ে আসাদের দুই পা, হাত থেতলে দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ড্রেনের ওপর ফেলে রেখে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার সময় আসাদের সাথে থাকা নাহিদ নামের অপর এক যুবক আহত হয়। তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতের চাচাত ভাই কাজী আলমগীর জানান, এর পূর্বেও মাস দুই আগে আসাদকে একবার পিটিয়ে আহত করা হয়। সে ঘটনায় থানায় মামলা চলমান রয়েছে। সেই মামলার আসামিদের নেতৃত্বেই আসাদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিহত আসাদ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই গ্রুপের সক্রিয় কর্মী ছিল। এ নিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সাথে দ্বন্দ্ব ছিল বলেও জানান তিনি।
মুক্তাগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল মজিদ জানান, হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে তিন জনকে আটক করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া চলমান আছে। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মাসুম আহম্মেদ ভূঁঞা দুপুরে ঘটনস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি ঘটনার সাথে জরিতদে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন।
এদিকে বিকাল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে পোস্টমর্ডেম শেষে নিহতের লাশ মুক্তাগাছা শহরে পৌছলে শত শত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও বিক্ষুব্দ লোক শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় তারা মুক্তাগাছা থানার সামনে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কে লাশ রেখে খুনিদের গ্রেফতার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
এসময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দ, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবিএম জহিরুল হক জহির, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দেবাশীষ ঘোষ বাপ্পী, আওয়ামী লীগ নেতা মো. তারেক, বিল্লাল হোসেন মন্ডল, আক্রাম হোসেন জনি, কাজী আলমগীর হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এসময় বক্তারা স্থানীয় এমপি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, পৌর মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকারকে হত্যাকাণ্ডের মদতদাতা এবং উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য মাহবুবুল আলম মনিকে মূল হত্যাকারী হিসেবে উল্লেখ করে বক্তব্য প্রদান করেন। বিক্ষোভ থেকে দ্রুত মাহবুবুল আলম মনিসহ খুনিদের গ্রেফতারে দাবি জানানো হয়।
অবরোধ চলাকালে সড়কের দুই পাশে যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে খুনিদের গ্রেফতারে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
বাবু/জেএম