শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫ ২১ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫
ড. ইউনূসকে নিয়ে বিদেশি বিবৃতি কীসের ইঙ্গিত
ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৪:১৯ PM

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বনেতা চিঠি দেন ১৬০ বিশ্বনেতা। তাদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস হোর্তা, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের মতো ব্যক্তিত্ব। এক্ষেত্রে সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয় হচ্ছে ড. মুহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করা নিয়ে বিবৃতি দেওয়া হলেও তাতে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ড. ইউনূসের মামলার আড়ালে আসন্ন বাংলাদেশ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বেশি প্রাধান্য দেওয়ায় তা ভিন্ন ইঙ্গিত বহন করে নিঃসন্দেহে। এখানে স্পষ্ট যে বিশ্বনেতাদের মূল লক্ষ্য ড. ইউনূসের মামলা স্থগিত নয়। বরং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তা বানচাল করে দেওয়ার অপপ্রচেষ্টা মাত্র। স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুসারী বিশ্বনেতারা সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে বাংলাদেশের বিরোধিতা করে আসতেছে। এই বিরোধিতাস্বরূপ ভিসা=নীতিসহ এই ধরণের বিবৃতি দিয়েছে বিশ্বের ১৬০ জন নেতা। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁদের অনুসারী বিশ্বনেতারা স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি বিএনপি-জামায়াতের সাথে আঁতাত করে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করে পিছনের দরজা দিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে অবৈধ উপায়ে ক্ষমতায় আসীন করার জন্য তাঁদের এই অপপ্রচেষ্টা।

বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি সুপরিচিত গণতান্ত্রিক দেশ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক পথচলার যে ধারা শুরু হয়েছিল তার পরিপূর্ণতা লাভ করে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে। তাঁর দীর্ঘ ১৪ বছরেরও অধিক সময়ে কঠোর পরিশ্রম দিয়ে এই বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও তার চর্চাকে অব্যাহত রেখে চলেছে।

এটি পুরো বিশ্বে স্বীকৃত শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতি বদলে দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ পুরো বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে গত এক দশকে বার্ষিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির অর্জন করেছে। বাংলাদেশের সামাজিক সূচকগুলোও  বেশিরভাগ দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীদের চেয়ে ভালো।

 শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশ গত ৫০ বছরে প্রচুর অগ্রগতি করেছে। স্বাধীনতার পর দরিদ্রতম দেশগুলোর তালিকায় থাকলেও এখন এটি দ্রুত বর্ধনশীল একটি অর্থনীতি। ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশ গত ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বিশ্বাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং পররাষ্ট্রনীতির উন্নয়নসহ অন্যান্য সবদিকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির মাধ্যমে স্থিতিশীল একটা অবস্থা বিশ্ব মানচিত্রে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, দৃঢ় মনোবল, প্রজ্ঞা ও অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে অন্যরকম উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তিনি বিশ্বনন্দিত নেত্রী হিসেবে পেয়েছেন স্বীকৃতি।

বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে ৩৭তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৫০ সাল নাগাদ ২৩তম অর্থনীতিতে উন্নত দেশে পরিণত হবে। আর ২০২৬ সালেই বাংলাদেশ ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ এবং ২০৪১ সালেই ‘উন্নত দেশ’ হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তার বড় প্রমাণ হলো গত কয়েক বছর ধরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি দেশের একটি আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। মেট্রোরেল ও পদ্মাসেতু উদ্বোধন দুটিই উন্নয়নের মাইলফলক। সফলভাবে কারোনা মহামারি মোকাবিলা, শিক্ষা, যোগাযোগ অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নারীশিক্ষা, চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা শতভাগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে বই বিতরণ, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তালাকপ্রাপ্ত নারীদের সহায়তা, অটিজম, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।

গণতন্ত্রের এই ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১৪ বছর যাবৎ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের জনসাধারণের গণতান্ত্রিক চর্চাকে অব্যাহত রাখতে সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরত্ব উপলব্ধি করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরের মতো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন সংঘটনের লক্ষ্যে সংবিধান অনুযায়ী গঠন করেছে একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। দেশের রাজনীতিতে সকল দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করণে সকল দলকে স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা তথা সভা-সমাবেশ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। জাল ভোট যেন কেউ না দিতে পারে সেই জন্য ভোটার আইডি লিস্টে ভোটারদের ছবি যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রাতের আঁধারে যেন কেউ ব্যালট চুরি করে ক্ষমতায় আসতে না পারে তার জন্য নির্বাচনে ডিজিটাল ইভিএম প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার। এর সবই করা হয়েছে একমাত্র সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সংঘটনের মাধ্যমে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখার জন্য। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদদের রক্তে লিখিত পবিত্র সংবিধানের আলোকেই আওয়ামী লীগ সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সংঘটনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

ড. ইউনূসের মামলা স্থগিতে বিশ্বনেতাদের বিবৃতিতে বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে আসা এবং তাতে প্রাধান্য দেওয়া সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বিএনপি-জামায়াত জোট আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে আঁতাত করে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করতে প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। বিশ্বনেতাদের উক্ত বিবৃতিতে ড. ইউনূসের মামলা স্থগিত অপেক্ষা বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রাধান্য দিয়ে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিশ্বনেতাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রকেই ইঙ্গিত করছে।

বাংলাদেশ বীরের জাতি। কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে তারা ভয় পায় না। ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য অনেক বিশ্বনেতাদের বিরোধিতাকে উপেক্ষা করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বুকের রক্ত দিয়ে অর্জন করেছিল স্বাধীনতা। মহান মুক্তিযুদ্ধের শক্তিতে উদ্বুদ্ধ বাঙালি জাতি এখনো কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে তোয়াক্কা করে না। বঙ্গবন্ধুতনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি দেশের অভ্যন্তরের ও বাইরের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সব ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে জয় করে সোনার বাংলা বিনির্মাণে এগিয়ে যাবে।

লেখক : ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত