রবিবার ৬ জুলাই ২০২৫ ২২ আষাঢ় ১৪৩২
রবিবার ৬ জুলাই ২০২৫
অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা জয় ও কিছু প্রশ্নের উত্তর
জুবায়ের আহমেদ
প্রকাশ: বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৩, ৫:০৮ PM
ভারতের আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গত ১৯ নভেম্বর স্বাগতিক ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ৬ষ্ঠ বারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া। টুর্নামেন্ট শুরুর পূর্বে ও শুরুতে দুই ম্যাচে পরাজয়ের কারনে সম্ভাব্য শিরোপা প্রত্যাশী দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার নাম উচ্চারিত না হলেও অজিরাই অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে শিরোপা জিতেছে। স্বাগতিক হিসেবে সবচেয়ে শক্তিশালী ও অপরাজিত ফাইনালে উঠা ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জেতা অস্ট্রেলিয়াকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। 

১৯৭৫ সালের প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইংল্যান্ডে। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল উইন্ডিজ। ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপও অনুষ্ঠিত হয় ইংল্যান্ডে। এই বিশ্বকাপে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল উইন্ডিজ। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপও অনুষ্ঠিত হয় ইংল্যান্ডে। সেই বিশ্বকাপে উইন্ডিজকে হারিয়ে শিরোপা জিতে ভারত। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ভারত ও পাকিস্তানে। এই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জিতে অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে। এই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জিতে পাকিস্তান। 

টানা ৬ বিশ্বকাপে স্বাগতিক দল চ্যাম্পিয়ন শিরোপা জিততে না পারার পর ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শিরোপা জিতে সহ-আয়োজক শ্রীলঙ্কা। তবে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তানের লাহোরে। শ্রীলঙ্কা সেমিফাইনাল ম্যাচও খেলেছিল ভারতের ইডেন গার্ডেনে অর্থাৎ শ্রীলঙ্কা স্বাগতিক হলেও তাদের বড় দুটি ম্যাচ ছিল দেশের বাহিরে। ফলে স্বাগতিক দেশই শিরোপা জিতেছে সেটা বলা সঠিক নয়। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে। সেই বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা জিতে অস্ট্রেলিয়া। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় সাউথ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়ায়। সেই বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতে অস্ট্রেলিয়া। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় উইন্ডিজে। সেই বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শিরোপা জিতে অস্ট্রেলিয়া। 

২০১১ সাল থেকেই বিশ্বকাপের ইতিহাস বদলাতে শুরু করে। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মধ্যে ভারতে অনুষ্ঠিত ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শিরোপা জিতে ভারত। এরই মধ্যদিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে স্বাগতিক দল প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়ায়। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জিতে অস্ট্রেলিয়া। ২০১৯ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ইংল্যান্ডে। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জিতে ইংল্যান্ড। টানা তিন আসরে স্বাগতিক দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের বিশ্বকাপেও অন্যতম শক্তিশালী দল স্বাগতিক ভারত শিরোপা জিতবে, এমন ধারণা করা এবং সেমতে অপরাজিত ফাইনালে উঠলেও অস্ট্রেলিয়ার সাথে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হওয়ার ঘটনায় ক্রিকেট নিয়ে বর্তমানের অনেক ধারণা, আলোচনা ও বিতর্কের সমাধান হয়েছে বলেই আমি মনে করি।

এবার সেই প্রসঙ্গই নিয়েই বলব। ১৯৭৫ সাল থেকে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত ফাইনাল যে দেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই দেশ শিরোপা জিততে পারেনি অর্থাৎ শিরোপা জিতেছে সফরকারী দল। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে স্বাগতিক ভারত বিশ্বকাপ জেতার পর থেকে বিশ্বকাপ জেতা কিংবা তারও বেশ কিছুসময় আগে থেকে স্বাগতিক দলগুলো কর্তৃক উইকেট থেকে সুবিধা নেওয়ার প্রবণতা ধীরে ধীরে এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে, স্বাগতিক দলই সিরিজ কিংবা শিরোপা জিতবে, এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আইসিসির ইভেন্টগুলোতে স্বাগতিকরা নিজেদের পছন্দ মতো উইকেট তৈরী করতে না পারলেও প্রভাবশালী দলগুলো যে আইসিসির ইভেন্টেও সুবিধা নেয় তা এক প্রকার প্রতিষ্ঠিতই হয়ে গেছে ক্রিকেট বিশ্বে। ফলশ্রুতিতে ২০২৩ বিশ্বকাপে সত্যিকার অর্থেই শক্তিশালী দল এবং স্বাগতিক ভারত শিরোপা জিতবে তা ছিলো সময়ের ব্যাপার মাত্র কিন্তু ক্রিকেট যে অনিশ্চয়তার খেলা এবং স্বাগতিকরাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে, এটি ভুল ধারণা, তা প্রমাণ করার জন্যই হয়তো শিরোপা হাতে নিয়ে উল্লাস করার অপেক্ষায় থাকা ভারত ফাইনালে জয় পাওয়ার মতো কোনো প্রতিদ্বন্ধিতাই করতে পারেনি। ভারতের এমন পারফরম্যান্স ছিল ধারণাও বাহিরে। 

বিগত বছরগুলোতে স্লো উইকেট, স্পিন উইকেট, পেস উইকেট, স্পোর্টিং উইকেট, ফ্লাট উইকেট নিয়ে প্রচুর কথা হয়েছে। স্বাগতিক দলগুলো নিজেদের শক্তিমত্তা এবং প্রতিপক্ষের দুর্বলতা অনুযায়ী উইকেট তৈরি করে সুবিধা নেওয়ার বিষয় ক্রিকেট বিশ্বের বাস্তবতা। তবে আইসিসির ইভেন্টগুলো সবার জন্য সমান সুবিধার হলেও সদ্যসমাপ্ত ভারত বিশ্বকাপে ভারত বাড়তি সুবিধা নিয়ে বিশ্বকাপ জিতবে, এমন আলাপ ক্রিকেট বিশ্বে এবং বিশেষ করে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রচার হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ভারতকে হেরেই প্রমাণ করতে হল, ক্রিকেট সত্যিই অনিশ্চয়তার খেলা। স্বাগতিকরা চাইলেই যা ইচ্ছে করতে পারে না। প্রতিপক্ষ সব বিভাগে শক্তিশালী হলে ক্রিকেট এখনো গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলার খেলা, তা যে দেশে, যে উইকেটেই হোক না কেন। 

লেখক : শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম), কাটাবন, ঢাকা 

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত