বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫ ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
ধামরাইয়ে ভাঙা সাঁকোতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল গ্রামের মানুষের
ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৪, ৫:৩৭ PM
ঢাকার ধামরাই উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের রামভদ্রপাড়া ও পাচলক্ষী গ্রাম, মাঝখানে বংশী নদী। নদীর উপর বাঁশ, কাঠ ও সিমেন্টের খুটি দিয়ে তৈরি প্রায় ১৬০ ফুট লম্বা একটি সাঁকো। সাঁকোটি প্রায় ৬ বছর পূর্বে এলাকাবাসীর অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছিলো। যা বর্তমানে চলাচলের জন্য খুবই ঝুকিপূর্ণ।

কিন্তু ঝুঁকি নিয়েই দুই পাড়ের আমরাইল, রামভদ্রপাড়া, পাঁচলক্ষী, গবরা, কামারপাড়া, বিলকুষনাই, গাওতারা, ষাইট্টাসহ প্রায় ২০ টি গ্রাম এবং মির্জাপুর উপজেলার মানুষও যাতায়াত করেন। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ১১/১২ টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ভ্যানসহ শত-শত মানুষ চলাচল করছে এই ভাঙা সাঁকো দিয়েই।  

বুধবার (৩ জানুয়ারি) সরজমিনে গিয়ে জানা যায়,  দেশ স্বাধীনের পর থেকেই একটি স্থায়ী সেতুর অপেক্ষা  করছে এই এলাকার হাজারো মানুষ। সেতু না হওয়ায় বর্ষার সময় স্থানীয়রা নৌকা দিয়েই পারাপার হতো বলে জানা যায়। একসময় শুধু বাঁশ দিয়ে একজন দুজন করে মানুষ যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। পরে প্রায় ৬ বছর পূর্বে স্থানীয় লোকজন বাড়ি বাড়ি থেকে  চাঁদা তুলে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে বাঁশ, কাঠ ও সিমেন্টের খুটি দিয়ে সাঁকোটি নির্মান করে।

সাঁকো নির্মার্ণে সব চেয়ে বড় অবদান রাখেন আমরাইল গ্রামের আসলাম হোসেন। নিজেদের ও এলাকার মানুষের ভোগান্তি দূর করার জন্য নিজের বাড়ির কয়েকটি গাছ কেটে দেন সাঁকো নির্মাণের জন্য। এছাড়াও দেন নগদ টাকা। ৬ বছরে সাঁকোর বাশ, কাঠ  নড়বড়ে হয়ে গেছে। সাঁকোর মাঝে মাঝে বাঁশ নষ্ট হয়ে ভেঙে গেছে। এ অবস্থায় যে কোন সময় বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
  
স্থানীয়রা জানান, শুধু বর্ষা মৌসুমে না, সারা বছরই এলাকার মানুষের যাতায়াতের জন্য এই বাঁশের সাঁকোটিই একমাত্র ভরসা। সাঁকোটির বেহাল অবস্থা হওয়ার পরও চরম ঝুঁকি নিয়েই এলাকার সকল লোকজন ও স্কুল কলেজের ছাত্র- ছাত্রীদের চলাচল করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় যে কোনো সময় বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে নদীতে পড়তে পারে। এতে প্রাণহানি ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা মিলন হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন যাতায়াতে ভোগান্তির পর এলাকার সবাই মিলে বাড়ি বাড়ি টাকা তুলে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সাঁকোটি নির্মাণ করে যাতায়াত করছি। স্থানীয় বাসিন্দা আসলাম হোসেন এলাকার মানুষের যাতায়াতের কথা চিন্তা করে আমাদের পাশে থেকে সাঁকোটি করে দিয়েছিলেন। তার নিজের বাড়ির কয়েকটি গাছ ও অর্থ দিয়ে সাঁকোটি নির্মাণে সাহায্য করেছেন তিনি। মাঝে মাঝে আমরা নিজেরাই সাঁকোটি মেরামত করি। বর্তমানে সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। অনেক জাগায় ভেঙেও গেছে। সাঁকোটি একেবারে ভেঙে পড়ার আগেই মেরামত করা জরুরি।
 
হোসেন আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, আমার একটি নোয়া গাড়ি আছে। কিন্তু এই নদীতে সেতু না থাকায় গাড়িটি আমার নিজের বাড়িতে আনতে পারি না। নিরূপায় হয়ে নদীর ওপারে আরেক জনের বাড়িতে গাড়ি রেখে মাসে মাসে ভাড়া দিতে হয়। এতে সব সময় চিন্তায় থাকি গাড়িটির কোন ক্ষতি হয় কিনা? রাতের আঁধারে চুরি হয়ে যায় কিনা। সেতু থাকলে আর কোন চিন্তা করতে হতো না। সরকার যদি একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করে দেন তাহলে আমাদের আর কোন সমস্যা থাকবে না।

স্থানীয় বিনোদিনী আদর্শ বিদ্যালয় ছুটির পর পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সীমান্ত ভৌমিক, ফারহানা আক্তার, দীপ্ত ভৌমিক, অর্পিতা সরকারসহ কয়েক জন সাঁকো পার হচ্ছিলো। জানতে চাইলে সীমান্ত ভৌমিক বলে,  আমরা সব সময় ভয়ে ভয়ে এই সাঁকোটি পার হই। অনেক সময় সাঁকোটি পার হতে এলে ভ্যান, মোটরসাইকেল দিয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। তখন আমাদের যাতায়াতে সমস্যা হয় স্কুলে যেতেও অনেক দেরি হয়ে যায়। একটা ভালো বড় সেতু হলে আমাদের আর কোন সমস্যা হতো না। 

আমজাদ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি পাকা সেতুর আশায় আছি আমরা। ধামরাইয়ের শেষ প্রান্তে আমাদের এলাকা হওয়াতে আমরা একটু অবহেলিত। কিছুদিন আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য আসছিলেন একটি অনুষ্ঠানে। তখন তিনি ওয়াদা দিয়েছিলেন অতি তাড়াতাড়ি একটি সেতুর ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু আজও তার কোন ব্যবস্থা হয়েছে কিনা জানি না। 

যাদবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু  বলেন, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি। তাছাড়া নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পূর্বে আমাদের এমপি সাব এসেছিলেন এখানে। তিনি বলে গেছেন এখানে একটি সেতুর ব্যবস্থা করে দিবেন। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের আগে তো আর তা সম্ভব হবে না। 

এ বিষয়ে ধামরাই উপজেলা প্রকৌশলী তরুন কুমার বৈদ্য বলেন, ওই রাস্তাটি যদি এলজিইডির আওতাধীন হয় তাহলে আমরা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূর করার জন্য সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করবো।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত