ফেনীবাসীর পাশে দাঁড়াতে ব্যারিস্টার সুমন, পূর্ণিমা ও তাসরিফের উদ্যোগ
উজান ও বৃষ্টির পানিতে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনী। প্রাণ বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন পানিবন্দি মানুষজন। এ অবস্থায় এগিয়ে এসেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুরে নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, 'ফেনীতে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার অভিযানের জন্য দুই হাজার স্কয়ার ফিটের উন্মুক্ত ছাদ প্রয়োজন। তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন 01819023220।'
তার এমন পোস্ট দেওয়ার পর অনেকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করছেন।
এদিকে কোটা আন্দোলনের সময় চুপ থাকলেও এখন সরব হয়েছেন চিত্র নায়িকা পূর্ণিমা।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশের বেশ কয়েকটি জেলা। ইতোমধ্যেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে ফেনীর লক্ষাধিক মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেদের উদ্ধারের আকুতি জানাচ্ছেন তারা।
এমন অবস্থায় বন্যার্তদের সহযোগীতায় এগিয়ে আসছে দেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। সকলেই নিজ নিজ উদ্যেগে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, মৌলভীবাজারের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একের পর এক জনসচেতনামূলক পোস্ট শেয়ার করে যাচ্ছেন।
যে সকল পোস্টে বন্যার্তদের সাহায্যের আহ্বান জানানো হচ্ছে। একইসঙ্গে যারা এখনও প্রতিকূল অবস্থা থেকে উদ্ধার হতে পারেননি, তাদের তথ্যগুলোও তুলে ধরার চেস্টা করছেন।
তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে শুরু থেকেই নীরব থাকা পূর্ণিমা হঠাৎ করে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোয় তোপের মুখে পড়েছেন।
অনেকেই তার সরব হওয়ার সমালোচনায় মেতেছেন। বিষয়গুলো এই নায়িকাও টের পেয়েছেন। যে কারণে সমালোচকদের উদ্দেশে একটি বার্তাও তিনি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় এক স্ট্যাটাসে পূর্ণিমা লিখেছেন, আমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য, গালাগলি আপনারা চাইলে পরেও দিতে পারবেন। এই সময় আসুন বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসি।
পূর্ণিমার সেই পোস্টে অধিকাংশ ভক্তরাই একমত পোষণ করেছেন। তারা বলছেন, এখন সময় ঐক্যের। একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর। অযথা সমালোচনায় না মেতে পরস্পরকে সহযোগীতা করি।
ট্রাকে ২ স্পিডবোট নিয়ে ফেনী যাচ্ছেন তাসরিফ
টানা বৃষ্টি এবং ভারতের ডম্বুর ও গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখছে বাংলাদেশ। এতে দেশের ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও মৌলভীবাজারসহ বেশ কিছু অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের জীবন বিপর্যয়ের মুখে। সামাজিক মাধ্যমে উঠে আসছে আটকে পড়াদের আর্তনাদ; জীবন বাঁচাতে আকুতি জানাচ্ছেন তারা।
এদিকে যোগাযোগ অনেকটাই বিচ্ছিন্ন এসব অঞ্চলে। এমন অবস্থায় বন্যার্তদের সাহায্যে হাত বাড়ানোর চেষ্টা করছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ। যে যার চেষ্টায় এসকল দুর্গত অঞ্চলের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
এরইমধ্যে বন্যার্তদের সাহায্য করতে উদ্ধার সামগ্রী নিয়ে ফেনীর পথে এগিয়ে যাচ্ছেন দেশের তরুণদের প্রিয় ইনফ্লুয়েনসার ও সংগীতশিল্পী তাসরিফ খান ও ইউটিউবার কেটো ভাই। বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক মাধ্যমে এ খবর জানান তাসরিফ। তিনি লেখেন, লক্ষ্মীপুর থেকে ট্রাকে করে ২ টি স্পিটবোট নিয়ে ফেনীতে বন্যায় বিপদগ্রস্ত মানুষকে রেসকিউ করতে যাচ্ছি। আল্লাহ চাইলে খুব দ্রুত পৌঁছে আমরা দুপুর থেকে রাত অব্দি কয়েক শিফটে কাজ কারার চেষ্টা করবো। কেটো ভাই আর তার টিমও সাথে আছে।
সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর সাথে যোগাযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তাসরিফ লেখেন, তাদের থেকে তথ্য নিয়ে এবং দিয়ে একসাথে কাজ করার চেষ্টা করব। কার্যক্রম শুরু করে নেটওয়ার্ক পেলে আপনাদের কে যোগাযোগের নাম্বার দেব এবং আপডেট জানাব।
বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ জানিয়ে তাসরিফ লেখেন, সিলেটে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, দুঃখের হলেও সত্য যে একটা বড় অংশের মানুষ কিন্তু ঘর বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চান না। পরবর্তীতে তারাই সবচেয়ে বিপদের সম্মুখীন হয়ে থাকে। তাদের কে সম্ভব হলে খুঁজে বের করে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আমরাও তাই করার চেষ্টা করব।
সবশেষ তাসরিফ লেখেন, যুবক যারা আছেন আপনারা টিম করে মাওয়া অথবা লক্ষ্মীপুর থেকে ট্রাকে করে স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কার্যক্রমে এগিয়ে আসুন। এখন ত্রাণ দেওয়ার চাইতে মানুষকে উদ্ধার করাটা বেশি জরুরি। এই অঞ্চলে যথেষ্ট পরিমাণে সাপের উপস্থিতি রয়েছে তাই যারাই কাজ করছেন বা করতে আসবেন, দয়াকরে সতর্কতা অবলম্বন করবেন। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
আকস্মিক বন্যায় ৬ জেলায় মোট ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৩টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৪৮ জন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এতে জানানো হয়, আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোর ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।