জীবিকার তাগিদে তিন বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি দেন সোলাইমান মিয়া। পরিবার ঋণ করে তাকে বিদেশ পাঠায়। সেই ঋণের বোঝা এখনও মাথার ওপর থেকে সরেনি। তার আগেই ঝরে গেছে ২৪ বছর বয়সি এই যুবকের প্রাণ।
সৌদি আরবের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে দেশটির রাজধানী রিয়াদে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সোলাইমান।
সোলাইমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের বীরচন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল হক মিয়ার ছেলে। তিনি রিয়াদে একটি সেলুনে কর্মরত ছিলেন।
বিকেলে সোলাইমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। সোলাইমানের অসুস্থ্য বাবা, মা, বোন ও স্বজনদের আহাজারিতে বইছে শোকের মাতম। কোনো সান্ত্বনাই তাদের কান্না থামাতে পারছে না।
নিহত সোলাইমান মিয়া
মা রেহানা বেগম ছেলের জন্য হাউমাউ করে কাঁদছেন। গত মাসে সোলাইমান মোবাইল ফোন বিয়ে করেন। রমজানের আগে দেশে এসে আনুষ্ঠানিক ভাবে নববধূকে বাড়িতে আনার কথা ছিল। আমার ছেলের বউয়ের হাতে মেহেদির রং এখনো মুছেনি। তার আগেই আমার সব শেষ হয়েগেছে। মোবাইলে ছেলের ছবি দেখে একটু পরপর বুক চাপড়াতে থাকেন তিনি। আহাজারি করতে করতে বলছিলেন, ছেলের লাশটা অন্তত দেখতে চাই। কিন্তু লাশ আনতেও নাকি অনেক টাকা লাগবে। এত টাকা আমি এহন কই পাব? এহনও ৪ লাখ টাকা দেনা শোধ করতে পারি নাই। পাওনাদারদের টাকাই দিব ক্যামনে?
সোলাইমানের প্রতিবেশি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম জানান, চার ভাইবোনের মধ্যে সোলাইমান দ্বিতীয়। তিন বছর আগে সৌদি আরব যান তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে রুমেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। সোলাইমানের বাবা অসুস্থ্য তাই সে গত মাসে মোবাইল ফোনে বিয়ে করেন। রমজানের আগে দেশে এসে বউ তুলে আনার কথা ছিল।
আব্দুর রহিম মেম্বার বলেন, সকালে এক বাংলাদেশি ফোন করে সোলাইমানের মৃত্যুর খবর জানায়। এক বছর আগে ধার-কর্জ করে তার ছোট ভাইকে সৌদি-আরব নিয়ে গেছেন। পরিবারের এই অবস্থার মধ্যে আমরা সোলাইমানের লাশ দেশে আনতে সরকারি সহযোগিতা চাচ্ছি।