নাটোরের গুরুদাসপুরে একদিকে চলছে চৈত্রের মাঝারি তাপপ্রবাহ অন্য দিকে বিদ্যুতের লোডশেডিং। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারনে সেচ নিয়ে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ। দিন-রাত মিলে ৮-১০ বার লোডশেডিং হচ্ছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে সেচ ও কাঙ্খিত ফসল উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় ইরি-বোরোসহ বিভিন্ন পর্যায়ের চাষিরা। বিদ্যুৎ অফিস বলছে চাহিদার বিপরীতে প্রাপ্তি কম। সেকারনে লোডশেডিং হচ্ছে।
লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজের কারনে সেচ কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক মোটরগুলো (সেচযন্ত্র) পুড়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকদের ভোগান্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে। বাড়ছে উৎপাদন খরচও।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ গুরুদাসপুর জোনাল অফিস সূত্রে জানাযায়, গুরুদাসপুরে ৬২ হাজার ১৯০ জন পল্লী বিদ্যুতের উপকারভোগী গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে বাণিজ্যিক গ্রাহক রয়েছেন ৩ হাজার ৪৮৩ জন। সেচ কাজে ব্যবহৃত গভীর অগভীর মিলে রয়েছে ১ হাজার ৩১১টি সেচ পাম্প। প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়ছে। গুরুদাসপুরে ২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে ১৬ মেগাওয়াট। বাধ্য হয়েই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় বোরোর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েও বোরো আবাদ হবে বলে আশা করছেন তারা।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠজুড়ে শোভাপাচ্ছে ইরি-বোরো,ভুট্টা,তরমুজ,বাঙি,মিষ্টি কুমড়াসহ নানা জাতের সবজির আবাদ। যার সবই সেচ নির্ভর। লোডশেডিংয়ের সময় সেচযন্ত্র বন্ধ থাকায় কৃষক মাঠে বসে বিদ্যুতের জন্য অপেক্ষা করছেন। চাহিদামতো সেচ দিতে পারছেন না বলে অনেকের জমির পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। যতক্ষন বিদ্যুৎ থাকে সবটুকু সময় সেচযন্ত্র চালিয়েও অনেকের সেচ চাহিদা পুরণ হচ্ছেনা।
ধারাবারিষা গ্রামের কৃষক জবতুল্লা বলেনে. দুই বিঘাতে বোরো আবাদ করেছি। ঘনঘন লোডশেডিং হচ্ছে। একারনে তাকেও সেচের জন্য বারবার জমিতে ছুটতে হচ্ছে। জমি শুকিয়ে না গেলেও কাঙ্খিত পানি পাচ্ছেন না তিনি। এভাবে লোডসেডিং চলতে থাকলে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় আছেন তিনি।
একই মহল্লার সেচযন্ত্রের মালিক ইয়াছিন আলী জানান, লোডশেডিং আর লো-ভোল্টেজের কারনে মোটর পুড়ে যাওয়ার ঝুকিতে থাকে। রাত-দিন সেচ কাজ চালিয়েও কৃষকদের পানির চাহিদা পুরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে প্রায়ই তাদের সাথে কথা-কাটাকাটির মতো ঘটনা ঘটছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ জানান. চলিত বছরে বোরোর লক্ষ্যমাত্রা হয়েছে ৫ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে। তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ে সময়মতো সেচ দিতে না পারলে ফসল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ গুরুদাসপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মমিনুল ইসলাম জানান. চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ প্রাপ্তি কম। রমজানে চাহিদা আরো বেড়েছে। একারনে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এতে বোরো চাষে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তবে তিনি কৃষকদের অফপিক আওয়ারে (রাত ১১ টা থেকে ভোর ৫ টা) সেচযন্ত্র চালানোর পরামর্শ দেন। বিদ্যুতের কারনে ফসল উৎপাদন ব্যবহত হবার আশঙ্কা থাকলে কৃষকদের বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে যোগাযোগের পরামর্শও দেন তিনি।