সূর্যের জ্বলন্ত রশ্মিতে যেন টগবগে আগুন ঝরছে। নিজের উত্তাপ শক্তিমত্তা জানান দিতে বিন্দুমাত্র ছাড় দিচ্ছে না শহর, গ্রাম, পথ-ঘাট সবখানেই সূর্যের খরতা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ছুঁই ছুঁই। বাতাসেও আগুনের ছটা। যা তীব্র নয়, মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে বৃষ্টিশূন্যতা।হিটস্ট্রোকে প্রতিনিয়ত দেশের কোথাও না কোথাও কেউ মারা যাচ্ছেন। আর এই শঙ্কায় রাতে ধান কাটছেন এখানকার কৃষকরা।
উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের গাজীর বাজার সংলগ্ন আখাউড়া-আগরতলা সড়কের পাশে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে রাতে ধানকাটার সময় একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগাম জাতের ধান পাক ধরায় কৃষকরা কাটা শুরু করেছেন। কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহের কারনে দিনের বেলা হিটস্ট্রোকসহ বিভিন্ন অসুস্থতার ভয়ে ধান কাটতে পারছেন না তার। রাতে গরমের তীব্রতা কিছুটা কম। তাই রাতের বেলায় ধান কাটছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে আখাউড়ায় আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৭১৬ হেক্টর জমিতে। গতবছর এ উপজেলায় বোরো আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন হয়েছিল ৩৮ হাজার ৫৯৭ মেট্রিকটন ধান।
গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন বেড়েছে ১৬ হেক্টর জমিতে। রাতে ধান কাটছে উপজেলা দক্ষিণ ইউনিয়নের বড় কুড়িপাইকা গ্রামের কৃষক ফরিদ মিয়া।এসময় তিনি বলেন, ভোরে মাঠে গিয়ে ধানের জমিতে কাজ শুরু করতেই সূর্য উঠছে। সূর্যের তাপে গরমে শরীর ঘেমে অসুস্থি লাগে। রাতের বেলা জমিতে যেমন বাতাস থাকে তেমনি ঠান্ডাও থাকে। আমি মনে করি এই সময়ে রাতেই ধান কাটার উপযুক্ত সময়।
পাশের দাঁড়িয়ে থাকা মোছাঃ রিপা আক্তার নামে এক নারী অপেক্ষা করছেন হারভেস্টার মেশিনের জন্য। এই জমি কাটা শেষ হলে তিনি তার জমিতে নিয়ে যাবেন। ওই নারীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, তিনি উপজেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরে চাকরি করেন।তার পিতা অসুস্থ তাই তিনি শ্রমিক নিয়ে আসছে। হারভেস্টার দিয়ে ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যাবেন।তিনি আরও বলেন, দিনের বেলা কাঠফাটা রোদ আর দাবদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। তাই দিনের বেলা হিটস্ট্রোকের ভয়ে অনেকেই ধান কেটে দিতে রাজি হয়নি। রাতে তাপমাত্রা কিছুটা কম আর সামান্য বাতাস আছে যা একটু ঠান্ডা অনুভূতি হয়। দিনের বেলায় বাতাসও মনে হয় আগুনের ছটা। তাই রাতে ধান কাটছি।
হারভেস্টারের চালক শিমুল মিয়া জানান, দিনের বেলা ধান কাটা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।দিনে গরমের তীব্রতায় ঘন্টা দুয়েক ধান কাটলেই মেশিন গরম হয়ে কাটতে সমস্যা হয়। তাই সে রাতে ধান কাটছে।রাতে একটানা ১০-১২ ঘন্টা কাটলেও মেশিনে কোন সমস্যা হয়না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এসময়ে প্রকৃতি বিরূপ আচর করছে।প্রচণ্ড দাবদাহে আমাদের কৃষকদের দিনের বেলা ধান কাটা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অতিরিক্ত গরমে কাজ করলে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। যারা এই গরমে মাঠে কাজ করবেন তাদের প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশাপাশি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে।
আমরা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। সকাল ১১ টার পর থেকে দুপুর সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সূর্যের তীব্রতা বেশি এই সময়টা বাদ দিয়ে কৃষকদের ধানকাটা কথা বলা হচ্ছে। বিশেষ করে বিকেল থেকে মধ্যে রাত পর্যন্ত হারভেস্টার মেশিন ব্যবহার করে দ্রত ধান সংগ্রহ করতে পারবে। এতে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।