বৈশাখের শুরু থেকেই তীব্র তাপদাহে পুড়ছে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলাসহ সারাদেশ। আরো দুদিন এই অবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বেশ কয়েক দিনের টানা তাপদাহে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। গরমে হাসফাস অবস্থা মানুষের। দক্ষিণের বায়ুপ্রবাহ না থাকায় তাপ প্রবাহের স্থায়ীত্ব বেশি হচ্ছে। ফলে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে।
এদিকে তীব্র তাপদাহে দীর্ঘসময় ধরে লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে উপজেলার সাধারণ মানুষ। গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
নেত্রকোনা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, শনিবার (৪ মে ) বিকেল ৩টায় কেন্দুয়ায় তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দুপুর ১২টায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস । দুপুর ১২টায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৪৯ শতাংশ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কেন্দুয়া উপজেলার বেশীরভাগ এলাকায় দিনের দীর্ঘ একটা সময় ধরে বিদ্যুতের যথাযথ সরবারহ থাকছে না। দিনের দীর্ঘ সময় ধরে লোডশেডিং হচ্ছে। আর বিদ্যুৎ আসলেও আধা ঘন্টা থেকে সর্বোচ্চ এক ঘন্টার বেশী থাকছে না।
উপজেলার শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা জিয়াউল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নামাজের সময়ও বিদ্যুৎ থাকে না। আমরা ঠিকমতো নামাজও পড়তে পারি না। প্রায় সময় বিদ্যুৎ থাকে না। কয়েকঘন্টা পরপরই বিদ্যুৎ আসে, কিছুুক্ষণ থাকার পর আবার চলে যায়।’ লোড শেডিংয়ের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষার্থীরা। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী জানান, ‘বিদ্যুৎ ঠিকমতো না থাকায় পড়াশোনা করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে ঠিকমত পড়তে বসতে পারিনা’
কেন্দুয়া বাজারের ব্যবসায়ী আল মামুন বেপারী বলেন, প্রচণ্ড গরমে মনে হচ্ছে পুরো উপজেলা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় চলাচল করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে জানা যায়, বেশ কয়েকদিন যাবৎ থেকে উপজেলায় তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এতে হাসপাতালেও গরমজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গরমে ডায়রিয়া, জ্বর, হিটস্ট্রোক আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেশ কিছু শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে। গরমে শিশুরাই বেশি ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।
কেন্দুয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. মজিবুর রহমান জানান, ‘স্বাভবিক সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল দিনে ১৬ মেগাওয়াট ও রাতে ২২ মেগাওয়াট। ‘তীব্র গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দিনে ২০ মেগাওয়াট ও রাতে ২৪ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। আবার রাত ১২ টার পর বিদ্যুৎ পাচ্ছি মাত্র ৮ মেগাওয়াট। আমরা চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। যার ফলে গ্রাহকদেরকে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিতে পারছি না।
কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.এবাদুর রহমান বলেন, ‘গরমে শিশুদের ডায়রিয়া, টাইফয়েড, শরীরে ঘাম বসে নিউমোনিয়া, ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, জ্বর ও পশ্রাবে সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। এসব রোগ নিয়েই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে তারা। আমরা শিশুকে ঘরের বাইরে বের হতে না দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি অভিভাবকদের। সেই সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি ও টাটকা খাবার খাওয়াতে ও ফ্যানের নিচে রাখতে বলছি।