এক মাস যাবৎ চট্টগ্রামে শিশুদের জীবনরক্ষাকারী হিসেবে বিবেচিত তিন ধরনের টিকার সংকট দেখা দিয়েছে।
একই সাথে কুকুর, বিডালের কামড়/আঁচড়ে আক্রান্ত শিশু ও প্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধকের সরবরাহ না থাকায় রোগীদেরকেই উচ্চ মূল্যে তা বাজার থেকে কিনে নিতে হচ্ছে। এতে করে প্রায় আড়াই লাখ শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ঝুঁকির পাশাপাশি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্তের হার বৃদ্ধির আশংকা করা হচ্ছে ।
তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছেন, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে শিশুদের জন্য জরুরী বিদেশি টিকার সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে । যদিও শনিবার (১৭ আগস্ট) চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে টিকা দান কেন্দ্রের দ্বায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, কিছু টিকা সরবরাহ হয়েছে৷ তবে সেটি পর্যাপ্ত না।
শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, শিশুদের মারাত্মক ডিপথেরিয়া, হুপিং কফ ও ধনুষ্টংকারের প্রতিরোধে পেন্টাভ্যালেন্ট, নিউমোনিয়া প্রতিরোধে পিসিভি এবং পোলিও প্রতিরোধে আইপিভি টিকা দেওয়া হয়। শূন্য থেকে দশ মাস বয়সী শিশুর জীবন রক্ষায় অতি প্রয়োজনীয় এসব টিকা খুবই জরুরী। কিন্তু চট্টগ্রামে অন্তত একমাস ধরে কোনো টিকাদানকেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে সরবরাহ না থাকায় এসব বিনামূল্যের টিকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না৷
বাপ্পি নামের একজন অভিভাবক বাংলাদেশ বুলেটিনকে অভিযোগ জানিয়ে বলেন, "আমি আমার দুই মাসের শিশুকে নিয়ে গত একমাস যাবৎ বিভিন্ন টিকা কেন্দ্রে ঘুরে কোন টিকার সন্ধান পাইনি। সংগত কারণে আমি আমার সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন।" সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতির কারণে টিকা সরবরাহ কমে গেছে।
চট্টগ্রামের পাশাপাশি অন্যান্য জায়গায়ও টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, সময়মতো এসব টিকা না দিলে নবজাতক ও শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে। এতে সামান্য ভাইরাসেই আক্রান্তের শঙ্কাও রয়েছে শিশুদের। তবে টিকা দিতে এক, দুই মাস বিলম্ব হলে শিশুদের বড় ধরণে কোন ঝুঁকির কারণ নেই উল্লেখ করে শিশুর অভিভাবকদের আতঙ্কিত না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন টিকাদান কেন্দ্রে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ৷
সরেজমিন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধকের জন্য একাধিক রোগী অপেক্ষা করছেন৷ বিড়াল ও কুকুড়ের কামড় ও আঁচড়ে আহত শিশু ও একজন নারীর অভিভাবকরা বাংলাদেশ বুলেটিনকে জানিয়েছেন, "হাসপাতালে এই টিকা নেই৷ বাহির থেকে আমাদেরকে কিনে এনে দিতে হবে৷ আপাতত একটি টিকাকে চারজনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া যাবে বলে চিকিৎসকরা আমাদের বলেছেন। " তবে সেখানে দ্বায়িত্বরত কেউই এই প্রসঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি৷
তবে একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ‘যে শিশুদের বয়স ৩ থেকে ছয় মাস তাদের এবং যাদের টিকা নেওয়া বাদ পড়ে গেছে তাদের অবশ্যই স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। তবে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে পর্যাপ্ত টিকা সরবরাহ নিশ্চিতের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
স্বাস্থ্যবিভাগের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও উপজেলায় বছরে চাহিদা ২ লাখ ৬৭ হাজার ৪৩ ডোজ টিকার। আর মাসে দরকার ২১ হাজার ৪২১ ডোজ। বেসরকারিভাবে প্রতি ডোজের দাম টাকা ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিগত জুন মাসে চট্টগ্রামে ২০ হাজার ডোজ টিকা এসেছে। তবে জুলাই মাসে চট্টগ্রামে কোনো টিকা সরবরাহ না আসায় চাহিদা মেটানো যায়নি। সরবরাহ নিশ্চিত করতে উর্ধ্বতন মহলে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ করা হচ্ছে।