গরু পাচারকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে গত রোববার পাঁচ ভারতীয় নাগরিককে আটক করে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)। এরপর বিজিবির সঙ্গে কয়েক দফা পতাকা বৈঠক হলেও তাদের ফেরত দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
বিগত কয়েক বছরের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী ভারতীয়দের বিজিবি ফেরত না দেওয়ার ঘটনা এটাই ‘প্রথম’ বলে জানিয়েছেন বিএসএফের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এমন ঘটনায় রীতিমতো বিস্মিত তারা।
গত রোববার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর সীমান্তের পদ্মা নদীতে নৌকায় করে তিনটি গরু পাচারকালে অস্ত্রসহ পাঁচ ভারতীয়কে আটক করে বিজিবি।
ভারতীয় চোরাকারবারিরা হলেন মুর্শিদাবাদ এলাকার রতন সিংহের ছেলে দ্বীপ সিংহ (২৩), বাইতুল হলদারের ছেলে রনি মহালদার (১৭), মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে সারফরাজ ইসলাম (১৮), আলেক শেখের ছেলে আসলাম শেখ (১৮) ও মেনাউলের ছেলে ওলিল মহালদার (১৮)। ৫৩-বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনির উজ জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, গত রোববার ও সোমবার বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে কয়েক দফা পতাকা বৈঠক হলেও আটক ভারতীদের ফেরত দিতে রাজি হয়নি বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ।
বিএসএফের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার দাবি, গত ১৭ আগস্ট রাতে মালদার নদী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাচার করা গবাদি পশু উদ্ধারের জন্য পাঁচজন লোককে ভাড়া করেছিলেন ১১৫ ব্যাটালিয়নের বিএসএফ সদস্যরা।
তিনি বলেন, আমাদের কর্মীরা নদীতে একটি সন্দেহজনক বস্তু ভাসতে দেখলে অবিলম্বে রেডিওর মাধ্যমে কুইক রিঅ্যাকশন টিম (কিউআরটি) এবং ইঞ্জিন-ফিটেড কান্ট্রি বোট (ইএফসিবি) কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেন। তখন পাঁচজন মাঝিকে নিয়ে দুটি ইএফসি নৌকা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখে, কলাগাছের সঙ্গে বেঁধে কয়েকটি গরু পাচার করা হচ্ছে। পশুগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করার সময় একটি নৌকায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় এবং প্রবল স্রোতে দ্রুত ভেসে যায়।
এসময় দ্বিতীয় নৌকাটি ত্রুটিপূর্ণ নৌকাটি টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু নদীর পানির উচ্চতা এবং প্রবল স্রোতের কারণে উভয় নৌকাই ‘অসাবধানতাবশত’ বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে। সেখানে এই পাঁচজনকে আটক করে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) বাহিনী।
সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের সদর দপ্তর ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিজিবি সদস্যদের ফোন করে বিষয়টি জানান। কিন্তু বিজিবি জওয়ানরা আটক পাঁচ ভারতীয়কে ছেড়ে দিতে অস্বীকার করলে একটি পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বিএসএফ কর্মকর্তারা দাবি করেন, অনুপ্রবেশের ঘটনাটি দায়িত্বপালন করতে গিয়ে ‘ভুলক্রমে’ ঘটে গেছে। অনুপ্রবেশকারীদের কোনো ‘খারাপ উদ্দেশ্য’ ছিল না। তাই দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ‘সুসম্পর্কের স্বার্থে’ আটক ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানায় বিএসএফ।
কিন্তু ‘বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির’ কারণ দেখিয়ে আটক ভারতীয়দের ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান বিজিবি সদস্যরা। পরে পাঁচ অনুপ্রবেশকারীকে স্থানীয় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।