চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গণপিটুনির ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬৭ জন।
একই সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৭৬ জন নারী ও কন্যাশিশু। গতকাল সন্ধ্যায় মানবাধিকার সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির তথ্যমতে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে গণপিটুনির অন্তত ১৪১ ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৬৭ জন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১১৯ জন। গত ২২ জুন সাবেক নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে হেনস্তা করা ও জুতার মালা পরানোর ঘটনা ঘটে, গত ১৬ জুন লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মানসিক ভারসাম্যহীন ৫০ বছর বয়সী এক বয়স্ক ব্যক্তিকে চোর সন্দেহ করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা, গত ১৩ মে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে জাকির হোসেন (৪১) নামে এক যুবলীগ কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
গত ৪ মার্চ দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ছিনতাইকারী সন্দেহে দুই ইরানি নাগরিককে গণপিটুনি দিয়ে আহত, গত ৩ মার্চ রাতে চট্টগ্রামের এওচিয়া ইউনিয়নে মাইকে ‘ডাকাত’ ঘোষণা দিয়ে ২ জন জামায়াত কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মাদারীপুরে ডাকাতির ঘটনায় শরিয়তপুরে ৭ জন ডাকাতকে গনপিটুনির ঘটনায় ৫ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়েছেন।
হবিগঞ্জের বাহুবলে মোবাইল ফোনসেট চুরির সন্দেহে জাহেদ মিয়া (২৮) নামে এক যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করার এক পর্যায়ে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে চুরির অভিযোগ এনে এক নারীকে লোহার খুঁটিতে বেঁধে মারধর করার পর জুতার মালা পরিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।
নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মাত্রাও ভয়াবহ। সংস্থাটির তথ্যমতে, গত ছয় মাসে কমপক্ষে ১০৪২ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ৪৭৬ জন, যাদের মধ্যে ২৯২ (৬০ শতাংশ) জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, ১১০ (২২ শতাংশ) জন নারী ও কন্যা শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৪ জনকে ও আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন নারী ।
২৫৩ জন নারী ও কন্যা শিশু যৌন নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন তন্মধ্যে শিশু ১৪৩ জন। গত মার্চ মাসে মাগুরায় আছিয়া নামে ৮ বছরের এক শিশুকে তার বোনের শশুর ধর্ষণের পর হত্যা চেষ্টা করে এবং শিশুটি ৮ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় (১৩ মার্চ) ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যায়।
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ফাতেমা নামের একটি শিশুকে (৬) ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ দীঘিতে ফেলে দেয়। গত ২৯ শে জুন কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণ এবং ৩০ শে জুন ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে মারধর ও স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ।
যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৯ জন ও আহত হয়েছেন ১৪ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন নারী । পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ১৬৬ জন, আহত হয়েছেন ২৭ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৭২ জন নারী।