লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে দালালের খপ্পরে পড়েন স্বামী লোকমান হাওলাদার। চলে তার ওপর অমানষিক নির্যাচন। স্বামীকে বাঁচাতে নিজ সন্তানকে বিক্রি করতে চান স্ত্রী রিমি আক্তার।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের নলী জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা রিমি।
বিদেশে ভালো বেতনে কাজের আশায় যেকোনো উপায়েই হোক স্বপ্নের দেশ ইতালিতে যেতে চেয়েছিলেন স্বামী লোকমান। তাই ১ বছর ৩ মাস আগে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া গিয়েছিলেন। সেখানে দালালের খপ্পরে পড়ে ইতালি যাওয়ার প্রস্তুতি নেন লোকমান।
কিন্তু গত ৩ মাস আগে থেকে তার উপর নেমে আসে টাকার জন্য নির্যাতন। স্বামীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ নেই স্ত্রী রিমি আক্তারের। শুধু মুঠোফোনে স্বামী লোকমানের বাঁচানোর আকুতি শুনতে পান স্ত্রী।
অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় রিমির। দালালদের টাকা দিতে দিতে আজ নিঃস্ব প্রায় পরিবারটি।
বসতঘরটিও বিক্রি করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন রিমি। স্বামীকে কঠিন অত্যাচার থেকে মুক্তি দিতে নিজের সন্তানকে বিক্রি করতে চান এই বাবা-মা। এ অবস্থায় ছেলে ওমর (১ বছর ৫ মাস) ও দুই মেয়ে দুটি মেয়ে হাওয়া (দেড় বছর) ও মরিয়ম (৫মাস) কে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই সন্তানদের বিক্রি করে দিতে চায়।
লোকমান হোসেনের স্ত্রী রিমি আক্তার (২৮) জানান, লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য এর মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিয়েছে সিলেটের হবিগঞ্জের শিরু ইসলাম নামে দালালকে।
আরো ১৫ লাখ টাকার দাবি করছে তারা। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে লিবিয়ায় ত্রিপলী জহুরা ঘাট ওসামা ক্যাম্পের একটি রুমে বন্দী করে রেখেছেন লোকমানকে। সেখান থেকে মুঠোফোনে ভয়েস পাঠিয়ে বাঁচানোর আকুতি জানান পরিবারের কাছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সন্তান ৩ জনকে বিক্রি করে হলেও ওর বাবাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতেছি।
রিমি আরো জানান, হবিগঞ্জে গিয়ে আমরা প্রশাসনের কাছ থেকে ভালো ভাবে সহযোগিতা পায়নি। আসামিদের গ্রেপ্তার করে তাদের মাধ্যমে লোকমানকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম।
সাপলেজা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কাজল খান (৬০) জানান, লোকমান হাওলাদার এক বছর তিন মাস আগে লিবিয়া গিয়েছেন। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে দালালে খপ্পরে পড়ে। তাকে আটকিয়ে রেখে নির্যাতন করে টাকা দাবি করেন দালালরা।
একবার সাড়ে ৭ লাখ টাকা দেয়ার পরেও মুক্তি মেলেনি আবার ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। তার পরিবার উদ্ধারে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রশাসন এটিকে গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টিকে সমাধান করুক এই প্রত্যাশা করি।
মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রাজিব বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের লিখিত অভিযোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। প্রথমে ডিবি তদন্ত করে দুই জন আসামী গ্রেফতার করেন। পরবর্তীতে ডিবি থেকে মামলাটি সিআইডি মানব পাচার শাখায় হস্তান্তর করা হয়।