চট্টগ্রামের পুরাতন চান্দগাঁও থানা এলাকায় খেলার টার্ফ ইজারা নিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের ছুরিকাঘাতে জুবায়ের উদ্দিন বাবু নামের এক যুবক নিহত হয়েছে৷ মূলত খেলার মাঠ (টার্ফ) ইজারা নিয়ে যুবদলের দুই গ্রুপের বিরোধ থেকে সৃষ্ট বিবাদে খেলার মাঠে এই হামলার ঘটনা ঘটে৷
অভিযোগ উঠেছে ঘটনায় স্থানীয় থানা ছাত্রদল নেতা আলফাজ ও বড় ভাই আমজাত, ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রুবেল প্রকাশ্য জড়িত ছিল৷ এই গ্রুপটির বিরুদ্ধে গত ৫ আগস্টের পর এই খেলার মাঠের জেনারেটর থেকে শুরু করে চান্দগাঁও থানা এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ব্যাপক অভিযোগ উঠলেও চান্দগাঁও থানা পুলিশ রহস্যজনক নীরব ভূমিকার কারণে শুক্রবারের এই হত্যাকান্ড ঘটানোর সাহস দেখিয়েছে বলে ধারণা করছে হামলার শিকার বিএনপি'রই অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতারা।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে নগরের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনার পর রাতেই নগর যুবদলের নগর কমিটি বিলুপ্ত ও কয়েকজন যুবদল নেতাকে বহিষ্কার করা হয়৷
তবে হামলায় সরাসরি জড়িত চান্দগাঁও থানা ছাত্রদলের আহবায়ক আবদুর রহমান আলফাজ, চান্দগাঁও ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মোহাম্মদ রুবেল প্রকাশ খোড়া রুবেলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের পরো কোন প্রকার সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। প্রয়োজনে বিষয়টি ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানাবেন বলেও জানান তারা।
বাবু হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী, সদ্য বিলুপ্ত মহানগর যুবদলের ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এই টার্ফটি টেন্ডার প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে ইজারা নেয়া হয়৷ এটি ইজারা দেয়ার পর নওশাদ আমাকে ফোন করে টার্ফের পার্টনারশীপ দাবি করে৷ অন্যথায় ৫ লক্ষ টাকা চাঁদাবি দিতে হবে বলে জানায়। বিষয়টি আমি তাৎক্ষনাত তাদের নেতা নুরুল আমিনকে জানালে তিনি বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন৷
মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি নওশাদ, চান্দগাঁও থানা ছাত্রদলের আহবায়ক আলফাজ ও তার বড় ভাই আমজাত, ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক খোড়া রুবেল, পারভেজ, হাজেরা তাজু কলেজ ছাত্রদল নেতা আরিফ সরসরি হামলায় নেতৃত্ব দেয়৷ হামলাকারীরা টার্ফে ঢুকে নির্বিচারে সবাইকে ছুরি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়৷ এসময় আমার ভাই বাবু নিহত হয় এবং আরও অন্তত আরো ৪/৫ জন গুরুতর আহত হয়।
ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী আলী আজম চমেক হাসপাতালে বাবুর লাশের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, নুরুল আমিনের নেতৃত্বে আলফাজ, আমজাত ও রুবেলরা এই হামলা চালায়৷ এসময় তাদের একজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে৷ বাবু হত্যা মামলায় এদের সবাইকে আসামী করা হয়েছে৷
এই ঘটনার বিষয়ে চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ আফতাব উদ্দিন বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, এই ঘটনায় ৪০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে৷ আসামীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে । ইতিমধ্যে একজনে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি অন্যান্যদের আইনের আওতায় আনা হবে৷
যদিও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. সাইফুল আলম বলছেন, "চান্দগাঁও এলাকায় সংঘটিত ঘটনার সাথে ছাত্রদলের কোন নেতা-কর্মী জড়িত ছিল না৷ এটা যুবদলের অভ্যান্তরিন বিরোধের ঘটনা৷ আমরা সব খতিয়ে দেখেছি।" এই হত্যা মামলার আলফাজের নাম দেয়ার নেপথ্য অন্য কোন কারণ বা বিরোধ থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ছাত্রদলের কোন নেতা-কর্মী অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকলে সংগঠন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব করবে না বলেও জানান সাইফুল আলম৷
অন্যদিকে ঘটনায় হতাহতদের দেখতে এসে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি'র আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ বলেন, আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যে বা যারা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে দলের নেতৃবৃন্দকে অবহিত করবো৷