আচরণ ভঙ্গের অজুহাতে ঢাকা কলেজের দক্ষিণায়ন হলের এক শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। গত সোমবার (৭ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টা থেকে ভোর রাত ৪টা পর্যন্ত এ নির্যাতন চালানো হয়।
জানা গেছে, ভুক্তভোগীর নাম মারুফ রেজা। তিনি ইংরেজি বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী। মারুফের অভিযোগ, তাকে নির্যাতনে নেতৃত্ব দেন কলেজ ছাত্রদলের সহ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক হাবিব হাওলাদার শিহাব ওরফে আশফাকুর রহমান শিহাব।
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শিহাবের সঙ্গে ছিলেন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল রাহাত ওরফে আফজাল হোসাইন, অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান অর্ণব।
মারুফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, আমি মারুফ রেজা ঢাকা কলেজের ইংলিশ বিভাগের ২য় বর্ষের (২১-২২ সেশনের) ছাত্র। গতকাল রাতে আমার জীবনের সব থেকে জঘন্য কালো অধ্যায়ের রচনা হয়। ঢাকা কলেজের দক্ষিণায়ন হলে ৩০১ নাম্বার রুমে গতকাল রাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত আমার ওপর চলে অকথ্য নির্যাতন। চার জনের নাম উল্লেখ করে তিনি লেখেন, সালাউদ্দিন ভাই রুমে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছিল। এক পর্যায়ে আমি সালাউদ্দিন ভাইকে বলি, ভাইয়া গালাগালি কইরেন না ছোট ভাই পড়ছে পাশে। এরপরই আমার দিকে তেড়ে আসে মারার জন্য।
এক পর্যায়ে আমার রুমের রামিম ভাই এবং চার তলার রাহাত ভাই ঠেকাতে আসলে তাদেরও গালাগালি করে। এরপর রাহাত ভাই নর্থ হল থেকে শিহাব ভাইকে ডেকে এনে রুম আটকে দেয়। এরপর রাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত আমার উপর নির্যাতন করে। একপর্যায়ে আমি স্যারদের বলার জন্য ফোন দিতে গেলে আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
নির্যাতনের সময়কার ২৪ মিনিটের একটি অডিও ক্লিপ থেকে শোনা যায়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে গালাগালি ও হেনস্তা করা হচ্ছে। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়। তরে কে বাঁচাবে? তোর কে বড় ভাই আছে? তাকে ফোন দে ইত্যাদি হুমকি দেওয়া হয়। এরপরই বেশ কয়েকটি আঘাতের শব্দ শোনা যায়। পুরো সময়জুড়েই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শোনা যায়।
অভিযুক্ত আল রাহাত নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেন, নির্যাতনের বিষয় না এটা, তার সাথে কথা বলা যাকে বলে আরকি। একটা ছেলে বেয়াদবি করে সরিও বলেনি। উল্টো সিনিয়র নিয়ে আসার হুমকি দিয়েছে। আমার রুমে আসা গেস্টের সাথে যদি সে বেয়াদবি করে ক্ষমা না চায় তাহলে রুমে থাকা ঠিক হবে কিনা? মারধর করিনি, তবে গালাগালি করেছি।
ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি শাহীনুর রহমান শাহীন ভুক্তভোগী মারুফ রেজাকে নিজেদের কর্মী আখ্যা দেন। তিনি বলেন, গতকালও সে আমাদের সাথেই প্রোগ্রাম করেছে। এটা নিজেদের নিজেদের ভেতরেই ঘটনা, আমরা নিজেরাই দেখছি, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, তিনি যেভাবে টর্চারের ঘটনা লিখেছে ব্যাপারটা আসলে তেমন না। অন্য সংগঠন থেকে ওকে প্রলোভন দেখিয়ে এগুলো করানো হয়েছে। এরপরও আমরা দুই পক্ষের সাথে কথা বলে যদি অভিযুক্তকে দোষী হিসেবে পাই অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।