ত্রিশালে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্যটি ছুটি চলাকালীন সময়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন হওয়া এই ভাস্কর্যটি কবির একটি গানের নামানুসারে তৈরি হয়েছিল এবং এটি স্থাপন করা হয় বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ ও পুরাতন কলা অনুষদ ভবনের মাঝখানের পুকুরপাড়ে।
একজন নারী দুহাত সংযুক্ত করে অঞ্জলি দিচ্ছে, ম্যুরালটি সেই ভাবনা বহন করতো। যেটি দেশের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী, নৃত্যপরিচালক, নৃত্য প্রশিক্ষক ও অভিনেত্রী মুনমুন আহমেদের হাতের ছবি থেকে করেছিলেন ভাস্কর্যবিদ মনিন্দ্র পাল। মুনমুন আহমেদ নিজেই বিষয়টি জানিয়েছেন এক ফেসবুক পোস্টে।
এই মুহূর্তে সেটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ম্যুরাল ভাঙার একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে মুনমুন আহমেদ নিজেই লিখেছেন, ‘‘খুবই দুঃখজনক, এই মুহূর্তে সেটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যুরাল ‘অঞ্জলি লহ মোর’! যেটি আমার হাতের ছবি থেকে করা হয়েছিল। এটি ভাস্কর্যবিদ মনিন্দ্র পাল করেছিলেন।’’
ফেসবুক পোস্টের নিচে একজন জানতে চেয়েছেন, ‘কেন ভেঙে ফেলা হচ্ছে?’ সেই প্রশ্নের জবাবে মুনমুন লিখেছেন, ‘দেশে কোন ভাস্কর্য থাকতে দেয়া হবে না!’
একজন লিখেছেন, ‘কি যে শুরু করেছে! এদেশের ইতিহাস শিল্প সংস্কৃতি সব ধ্বংস করে ফেলছে একদল মানুষরূপী দানব। ঘৃণা জানানোর কোন ভাষা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চার কোটির বেশি ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পুকুর গুলোর সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়। এর অংশ হিসেবেই নির্মিত হয় ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্যটি। তবে ৫ আগস্ট প্রশাসনিক পট পরিবর্তনের পর নতুন প্রশাসনের নির্দেশেই এটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, যিনি দুর্নীতি ও নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের মতে, প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান তুষার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে নির্মিত ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি ছিল নান্দনিক স্থাপনাগুলোর অন্যতম। প্রশাসন চাইলে নতুনভাবে পরিকল্পনা করে এটি রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিতে পারত।
এ বিষয়ে প্রশাসনের মধ্যে কেউই সরাসরি দায় নিচ্ছেন না। রেজিস্টার অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। প্রকৌশল বা পরিকল্পনা দপ্তর ভালো বলতে পারবে।
প্রকৌশল দপ্তরের উপ-প্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল ইসলামও একই সুরে জানান, আমি কিছু জানি না, পরিকল্পনা দপ্তরকে জিজ্ঞেস করুন।
পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান প্রশাসন ভাস্কর্যটি গ্রহণ করেনি, তাই এটি ভাঙা হয়েছে। সিদ্ধান্ত এসেছে উপাচার্য স্যারের পক্ষ থেকেই। মূলত শিক্ষার্থীরাই প্রথমে আপত্তি জানিয়েছিল, ভাঙার চেষ্টা করেছিল ৫ আগস্টের পর।