শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫ ২১ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫
আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা তা'ণ্ডবের ১৮ বছর আজ
বুলেটিন ডেস্ক
প্রকাশ: সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪, ২:১৩ PM
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ছিল বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিন। সেদিন ঢাকার রাস্তায় প্রকাশ্যে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ পিটিয়ে মারার ঘটনা সারাদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।

বিএনপি-জামায়াতের দাবি, একদলীয় শাসনের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই সেদিন রাজপথে তাণ্ডব চালায় আওয়ামী লীগ। রাজপথে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যার পর সেই লাশের ওপর নৃত্যের ঘটনাটি দেশের ইতিহাসে একটি অন্যতম নৃশংস ঘটনা।
কী ঘটেছিল সেদিন
২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর রাত ১২টার পর অষ্টম জাতীয় সংসদের বিলুপ্তি ঘটে। ২৮ অক্টোবর ছিল বিএনপি সরকারের শেষ দিন। সেদিনই বঙ্গভবনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার শপথ হওয়ার কথা ছিল। ২৭ অক্টোবর রাতে কেএ ম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করে।  

এমন অবস্থায় ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দেয় জামায়াত, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। পল্টন ময়দানে সমাবেশের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া বিএনপি নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এবং জামায়াত বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের ঘোষণা দেয়।
পল্টন ময়দানে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিল শ্রমিক দলও। সংঘাতের আশংকায় পল্টন ময়দান এবং আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। 

২৮ অক্টোবর সকাল থেকেই বায়তুল মোকারমের উত্তর গেইট থেকে শুরু করে পল্টন এবং তোপখানা মোড়ে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের সাথে ১৪ দলীয় জোটের অন্য রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও ছিল। অন্যদিকে জামায়াতের সাথে ছিল তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের কর্মীরা।
আওয়ামী লীগ কর্মীরা দৈনিক বাংলার দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে সংঘর্ষ শুরু হয় জামায়াতের কর্মীদের সাথে। এ সময় একের পর এক বিস্ফোরণ হতে থাকে। ইটের আঘাতে এক ব্যক্তি রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ কর্মীরা তাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে চারপাশ ঘিরে স্লোগান দিতে থাকে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর রাজনীতির ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন তারা।

পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা 
ঘটনার শুরু থেকেই পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যময়। পুলিশের উপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠাধারী কর্মীরা জামায়াতের সমাবেশ স্থলে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের শত অনুরোধেও পুলিশ কোন ভূমিকা রাখেনি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ভূমিকাও ছিল রহস্যজনক।
২৮ অক্টোবরের আগ থেকেই পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছিল, লগি-বৈঠা, কাস্তে বা অন্য কোনো অস্ত্রশস্ত্র বহন নিষিদ্ধ ও বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু পুলিশ এ ব্যাপারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি। আওয়ামী লীগের অফিসে লগি, বৈঠা সংরক্ষণ করা হচ্ছে বলে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার করলেও পুলিশ এ ব্যাপারে ছিল একেবারেই নীরব।

স্মৃতিচারণ করে যা বলছে বিএনপি-জামায়াত
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের গণমাধ্যমকে বলেন, এটি ছিল স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের উত্থানের প্রথম মহড়া। সেদিনও বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিল। তবে সরকারের যে ভূমিকা পালন করা দরকার ছিল তা তারা করেনি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, সেদিন জামায়াত-বিএনপির মধ্যে সমন্বয় থাকলে দিনভর তাণ্ডব চালাতে পারতো না আওয়ামী লীগ। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি ও জামায়াত- এই দুটি মিলেই একটা বিরাট শক্তি। এরা একসঙ্গে থাকলে বাকি সব দলকেও পরাজিত করা যায়। সেই ধরনের পরিকল্পনা ছিল না, সমন্বয়ও ছিল না। আর সেই সুযোগেই এই পরিস্থিতি হয়েছে।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত