বৃহস্পতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১ ফাল্গুন ১৪৩১
বৃহস্পতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রাজধানীতে স্কুলছাত্রীকে পাঁচজন মিলে ধ'র্ষণের পর হত্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২:৪৫ PM আপডেট: ০৩.০২.২০২৫ ৪:৫৯ PM
গাড়িচালক রবিন হোসেনের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর। দেড় মাসের পরিচয় সূত্রে সাক্ষাতের জন্য তাকে গত ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর মহাখালীতে ডেকে নেয় রবিন। সেখান থেকে হাজীরবাগে বন্ধুর ভাড়া করা বাসায় নিয়ে হাত-পা বেঁধে পাঁচজন মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। এরপর হাতিরঝিলে ফেলে দেয় তারা। ঘটনার ১৭ দিন পর রোববার হাতিরঝিল থেকে বস্তাবন্দি অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ধর্ষণ ও হত্যার শিকার মেয়েটি দক্ষিণখান এলাকায় মা-বাবার সঙ্গে থাকত। রবিন ও রাব্বির দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে গতকাল রোববার সকালে হাতিরঝিল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে রবিন ও রাব্বি। 

পুলিশ জানিয়েছে, মগবাজারের বাসিন্দা রবিনের স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। স্কুলছাত্রীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয়ের পর দেখা করার কথা বলে ১৬ জানুয়ারি মহাখালী ডেকে নেয়। কৌশলে তাকে হাজারীবাগে রাব্বির ভাড়া করা এক কক্ষের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে হাত-পা বেঁধে রবিন, রাব্বিসহ পাঁচজন মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এ সময় সে চিৎকার করলে মুখের মধ্যে কাপড় গুঁজে দেয় তারা। 
ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হতভাগ্য সেই স্কুলছাত্রী

ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হতভাগ্য সেই স্কুলছাত্রী

যেভাবে ধর্ষণ এবং হত্যা
হত্যাকাণ্ডের শিকার কিশোরীর বাবা ও মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ওই কিশোরীর বাবা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর দক্ষিণখানে। ১৬ জানুয়ারি বেলা দুইটার দিকে সে মা–বাবাকে বলেছিল, জরুরি কেনাকাটা করে দ্রুত বাসায় ফিরবে। কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও ফেরেনি।

কিশোরীটির বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে সেদিন দুপুরে বেরিয়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বাসায় ফেরেনি। তখন আমি আত্মীয়স্বজনসহ সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু মেয়ের খোঁজ না পেয়ে তিন দিন পর দক্ষিণখান থানায় একটি জিডি করি।’

মেয়েটির বাবা আরও বলেন, ‘আমার যে মেয়েটি স্কুলে যেত, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করত, আজ সে লাশ হয়ে বাসায় ফিরেছে। যারা আমার মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তাইফুর রহমান মির্জা বলেন, ‘মেয়েটির বাবা থানায় জিডি করার পর গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত শুরু করি। অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে মেয়েটির সন্ধান না পেয়ে তার মুঠোফোনের সিডিআর (ফোনকলের বিস্তারিত তথ্য) জোগাড় করি। সেখানে একটি সন্দেহজনক নম্বর পাই। সেটিই ছিল রবিনের মুঠোফোন নম্বর।’

রবিনের মুঠোফোনের সূত্র ধরে কীভাবে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটিত হলো, সে বিষয়ে তদন্ত তদারক কর্মকর্তা মো. নাসিম বলেন, রবিনের মুঠোফোন নম্বরের সিডিআর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কিশোরীটির সঙ্গে ঘটনার দিনই (১৬ জানুয়ারি) তাঁর প্রথম কথা হয়েছিল। রবিনের মুঠোফোনের সূত্র ধরে মহাখালীর একটি বাসার সন্ধানও পাওয়া যায়। এর মধ্যে গাজীপুর থেকে রবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর রাব্বিকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রথমে দুজনের কেউই কিশোরীর বিষয়ে তথ্য দিচ্ছিলেন না। পরে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁরা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান।

সহকারী কমিশনার নাসিম আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রবিন স্বীকার করেন, কিশোরীটিকে ‘ফাঁদে ফেলে’ সেদিন দুপুরে মহাখালীর একটি বাসায় নিয়ে যান তারা। এরপর তার হাত–পা বেঁধে ফেলেন। মুখে গুঁজে দেন কাপড়। তারপর পাঁচজন মিলে তাকে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে কিশোরীটি অচেতন হয়ে পড়ে। পরে সে মারা গেলে লাশ গুম করার পরিকল্পনা করা হয়।

কিশোরীকে হত্যা করার পর মরদেহ বস্তাবন্দী করা হয়। এরপর ১৬ জানুয়ারি ঘটনার দিন মধ্যরাতেই মহাখালী থেকে রিকশায় করে মরদেহ হাতিরঝিলের পুলিশ প্লাজার সামনের সেতুতে নিয়ে আসেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। মরদেহটি সেতু থেকে হাতিরঝিলে ফেলে দেন রবিন। 
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







সোস্যাল নেটওয়ার্ক

  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত