শনিবার ১৪ জুন ২০২৫ ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
শনিবার ১৪ জুন ২০২৫
পলিথিনসহ সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের বিকল্প বের করতে সচেষ্ট সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫, ৮:২৮ PM
বাংলাদেশ আজ একটি টেকসই, প্লাস্টিকমুক্ত ভবিষ্যতের দিকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ‘প্লাস্টিক ফ্রি রিভারস অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া (প্লিজ)’ প্রকল্পের জাতীয় জ্ঞান বিনিময় কর্মশালার আয়োজনের মধ্য দিয়ে। 

"প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবন ও সেরা চর্চার প্রসার" শীর্ষক এখ কর্মশালা আজ(মঙ্গলবার ) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন খাতের অংশীজন যারা কমিউনিটি-ভিত্তিক, উদ্ভাবনী প্লাস্টিক বর্জ্য সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

‘প্লিজ’ প্রকল্পটি একটি আঞ্চলিক উদ্যোগ যা বাস্তবায়ন করছে সাউথ এশিয়া কোঅপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (SACEP), এবং এটিতে সহযোগিতা করছে বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের প্রজেক্ট সার্ভিস অফিস (UNOPS)। বাংলাদেশে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং আজকের কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউট (IMS), আরণ্যক ফাউন্ডেশন, ও রেড অরেঞ্জ লিমিটেড।

পলিথিনসহ সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক হিসেবে যেসব সামগ্রি ব্যবহার করা হচ্ছে তার বিকল্প বের করতে সরকার চেষ্টা করছে জানিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়-এর উপদেষ্টা, বলেন, ‘আমাদের অভ্যাস বদলাতে পারলে এই ধরণের প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো সম্ভব। বিশ্বের অন্যান্য দেশ পারলে আমরাও চাইলে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে পারবো।’

পরিবেশ উপদেষ্টা  আরও বলেন, ‘সব ধরণের সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক আমাদের শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশগত দিক থেকেও অনেক ক্ষতি করছে। ফলে আমাদের এ দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের পূর্বপুরুষদের সময়ের কথা যদি চিন্তা করি, তারা কি এভাবে পলিথিন, প্লাস্টিকের জিনিস ব্যবহার করতেন? এখন তো প্লাস্টিকের বদলে অনেক ধরণের জিনিস তৈরি হয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করতে পারি।’

তিনি আরো বলেন, জুস খাওয়ায় সাধারণত ব্যবহার হওয়া স্ট্র-এর উৎপাদন বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জুলাই থেকে আমরা এর উৎপাদন বন্ধে কাজ করতে চাই। পলিথিনের বদলে পাটের ব্যাগ তৈরি করে সুলভমূল্যে গ্রাহককে দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।

ড. ফাহমিদা খানম, অতিরিক্ত সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, প্লাস্টিক সংকট মোকাবেলায় উদ্ভাবন ও অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তব্য দেন। একইসঙ্গে এ ধরণের কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

গ্লোবাল নেতৃত্ব থেকে গোয়েন লুইস (জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী), এবং সুধীর মুরলিধরণ (UNOPS কান্ট্রি ম্যানেজার) বাংলাদেশের পরিবেশগত নেতৃত্বে সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। 

গোয়েন লুইস বলেন,  ‘চাকরি সৃষ্টি হয়েছে, সচেতনতা বেড়েছে, বর্জ্য পুনর্ব্যবহার হয়েছে—তবু এসবের মধ্যে যে বিষয়টি আমার মনে সবচেয়ে গভীরভাবে দাগ কেটেছে, তা হলো এই প্রচেষ্টাগুলোর মানবিক দিক। বর্জ্য সংগ্রাহকদের স্বীকৃতি ও ন্যায্য পারিশ্রমিক দেওয়া হচ্ছে, নারীরা নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ পাচ্ছেন এবং তরুণরা সমাধান খোঁজার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি কেবল একটি পরিবেশগত আন্দোলন নয়, এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকেও একটি বড় পদক্ষেপ’।

সুধীর মুরালিধরন বলেন, ‘আমি এই সুযোগে আপনাদের সবাইকে আন্তরিকভাবে আমন্ত্রণ জানাতে চাই, যেন আপনারা এই জ্ঞান বিনিময় সভায় সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং এই সমাধানগুলো ও পরীক্ষামূলক কার্যক্রমগুলো থেকে শিখে, তা আমাদের দৈনন্দিন চর্চায় প্রয়োগ ও প্রসার ঘটাতে পারেন।’

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা এই মডেলগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার বিভিন্ন পথ নিয়ে আলোচনা করেন। তাদের সুপারিশগুলো ছিল:

স্মার্ট সিটি পরিকল্পনায় প্লাস্টিক বর্জ্য ট্র্যাকিং অন্তর্ভুক্ত করা।
বর্জ্য সংগ্রাহকদের জন্য জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনয়ন।
বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে প্লাস্টিক সংক্রান্ত শিক্ষা যুক্ত করা।

রেড অরেঞ্জ লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অর্ণব চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের সরকার পরিবেশবান্ধব। পরিষ্কার নদী, উপকূল ও কমিউনিটি যেন স্বপ্ন নয় বরং জাতীয় মানদণ্ড হয়, আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। রেড অরেঞ্জ লিমিটেড ঢাকার কল্যাণপুর খালে ভাসমান ব্যারিয়ার স্থাপন করে ইতিমধ্যে ৬৫ মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্য সংগ্রহ করেছে।  আইওটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্লাস্টিক দূষণ ট্র্যাক করছে।”

ড. মো. আবদুল মোতালেব, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক, সমাপনী বক্তব্যে বলেন,  “আমরা যেসব কাজ করছি, সেগুলো পাইলট পর্যায়েই থামিয়ে রাখা যাবে না। নিরবিচ্ছিন্ন সহায়তা থাকলে এমন কাজের মাধ্যমে সারাদেশে পরিবর্তন আনা সম্ভব।”

তিনি আরো বলেন, ‘আরণ্যক ফাউন্ডেশন সুন্দরবনে প্রথমবারের মতো প্লাস্টিক অডিট চালু করেছে এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক বর্জ্য খাতকে ডিজিটাল করার জন্য মোবাইল অ্যাপ ও নারী-অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত