শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫ ১১ শ্রাবণ ১৪৩২
শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
বিমান ফ্লাইজোনের ভেতরে সব ধরনের ভবন সরিয়ে ফেলতে হবে: বিআইপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ৯:০৩ PM
বিমান ফ্লাই জোনের ভেতরে সব ধরনের ভবন সরিয়ে ফেলতে হবে। না সরালে ভবিষ্যতে আবারও দুর্ঘটনা ঘটলে মৃত্যুর মিছিল বাড়তেই থাকবে। বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এরিয়ায় (বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ অঞ্চল) থাকা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ জনসমাগম হয়, এমন সব প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়া উচিত। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ‘মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা: জননিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের দায় ও করণীয়’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। 

শুক্রবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব বিষয় তুলে ধরেছে বিআইপি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিআইপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিমানবন্দরের রানওয়ের পর ৫০০ ফুট এলাকায় কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না। এর পরের ১৩ হাজার ফুট বা প্রায় ৪ কিলোমিটার অঞ্চলকে অ্যাপ্রোচ এরিয়া বলা হয়, যেখান দিয়ে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাপ্রোচ এলাকায় ১৫০ ফুট উচ্চতার স্থাপনা নির্মাণে সরকারের নগর কর্তৃপক্ষ ও বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দিক থেকে কোনো বাধা নেই। সেসব স্থাপনার কী ধরনের ব্যবহার হবে, সে বিষয়েও কোনো নির্দেশনা নেই সরকারের সংস্থাগুলোর। প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাপ্রোচ এলাকায় এ ধরনের স্থাপনা কারিগরিভাবে বৈধ হলেও কার্যত অনিরাপদ।

প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপে অ্যাপ্রোচ এলাকার স্থাপনার উচ্চতা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা আছে। কিন্তু সেখানকার ভূমির কী ধরনের ব্যবহার হবে, তা উল্লেখ নেই। গণজমায়েত হয় এ রকম কোনো স্থাপনার জন্য সেখানকার ভূমি ব্যবহার করা উচিত নয়। কৃষিজমি ও সবুজায়ন করা যেতে পারে, তবে এমন কিছু করা যাবে না, যাতে সেখানে পাখি আসে।

আন্তর্জাতিকভাবে বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা আদর্শিক মান ব্যাখ্যা করে তামজিদুল ইসলাম বলেন, আদর্শ মান অনুযায়ী বিমানবন্দর শহর থেকে দূরে থাকে। এই বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এলাকায় একাধিক আবাসিক এলাকা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে মাইলস্টোন স্কুলে যাতায়াত সহজ ছিল। না হলে হাসপাতালে নিতে দেরি হওয়ায় প্রাণহানি আরও বেশি হতে পারত।

সংবাদ সম্মেলনে  বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বিআইপি) এর সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, যাত্রীবাহী বিমানও যেকোনো সময় ফ্লাই জোনের ভেতর দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিশ্বের অত্যাধুনিক দেশগুলোতে বিমানবন্দর শহর থেকে দূরে থাকে। যখন ঢাকায় বিমানবন্দর বানানো হয়েছিল তখন আশপাশ ফাঁকা ছিল। কিন্তু রাজউক কার স্বার্থে উত্তরায় থার্ড ফিল্ড পরিকল্পনা করেছে তা জানা নেই। এই ভবনগুলো করতে রাজউক কেন বাধা দেয়নি? এর সঙ্গে রাষ্ট্রও জড়িত। রাজউক ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কেউ দায়িত্ব পালন করেনি।

তিনি আরও বলেন, রাজউকের বিরুদ্ধে কেন তদন্তের ব্যবস্থা নাই। বেইলি রোডের দুর্ঘটনার পর সব রেস্টুরেন্ট নিরাপদ হয়ে যাবে বলে ভেবেছিলাম সবাই। কিন্তু সব পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেছে। ফ্লাই জোনের ভেতরে হাউজিংগুলো বানাতে তারা কাউকে না কাউকে ম্যানেজ করেছে এটাই পরিষ্কার। অন্তর্বর্তী সরকার না পারলে রাজনৈতিক সরকার এসব সমাধান করতে কতটুকু পারবে সেটাই প্রশ্ন।

বিআইপির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, ফ্লাই জোন এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে কেন ভবন গড়ে উঠল সেই গবেষণা করা হয়েছে। কলেজ এলাকাটি আগে জলাবদ্ধ অবস্থায় ছিল এবং ওই ভাবেই রাখার কথা ছিল। যেহেতু রাজউক অনুমোদন দিয়েছে তাই তাদের দায়বদ্ধতা আছে। মাইলস্টোন কলেজের অনাপত্তি দিয়েছিল সিভিল এভিয়েশন। তারা কিভাবে এটি দিল। যে অনাপত্তি দিয়েছে সেই কর্মকর্তার এসব নিয়ে কোনো জ্ঞান নাই। এই দুর্ঘটনায় তারা সবাই জড়িত।

বক্তারা আরও বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নগর সংস্কারের কোনো উল্লেখ নেই। নগরকে ভবিষ্যতে নিরাপদ রাখতে পেশাগত মতামতের মূল্যায়ন করা হয় না। তাঁরা আরও বলেন, এরকম দূর্ঘটনা ইতিপূর্বে একাধিকবার ঘটেছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিকার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলবে। তাই এখনই এর প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত