ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ছাত্র-ছাত্রীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এর অংশ হিসেবে বিদ্যমান সিলেবাস সংস্কারের পাশাপাশি স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষে আইসিটি ও ইংরেজি কোর্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছড়িয়ে রয়েছে সারাদেশে।
দেশের উচ্চ শিক্ষার ৭০ শতাংশের বেশি প্রদানকারী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির। এদের সবার কথা বিবেচনা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাথমিকভাবে চার ক্রেডিটের একটি মিশ্র বা ব্লেন্ডেড কোর্স কারিকুলাম প্রণয়ন করেছে। এতে সহায়তা প্রদান করেছে সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই প্রোগ্রাম এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশ। মিশ্র বা ব্লেন্ডেড প্রশিক্ষণ পদ্ধতির লক্ষ্য অনলাইন ও সরাসরি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করা। এই মডেলে প্রথমে জাতীয় পর্যায়ে মূল প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর তারা মাস্টার ট্রেইনার ও মাঠপর্যায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়। ধাপে ধাপে এই প্রশিক্ষণ সারাদেশের কলেজগুলোতে সম্প্রসারিত হবে। ফলে শহরের মতই প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা একইমানের শিক্ষা পাবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগের প্রথম পর্যায়ে সারাদেশের বিভিন্ন কলেজের ৯০ জন আইসিটি শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এদেরকে কোর ট্রেইনার বলা হচ্ছে। এরা পর্যায়ক্রমে সারাদেশের ৯০০ জন শিক্ষককে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ২০২৬ সালের মধ্যে এই মাস্টার ট্রেইনারদের মাধ্যমে অন্তত ১২ হাজার শিক্ষককে আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া। যারা কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের আইসিটি কোর্স পড়াবেন। সোমবার (১০ নভেম্বর, ২০২৫) এই ৯০ জন কোর ট্রেইনার শিক্ষকের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি ভবনে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কোর ট্রেইনার প্রশিক্ষণের সমাপনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ সমাপনিতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. কাইয়ুম আরা বেগম ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম।।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মামুনুর রশীদ ভূ্ঞা, এটুআই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহা. আব্দুর রফিক এবং ইউনিসেফের চিফ অব এডুকেশন দীপা শংকর।
এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবুদ্দারদা স্বাগত বক্তব্য এবং এটুআই প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট লিড আব্দুল্লাহ আল ফাহিম শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের শেষে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী কোর ট্রেইনারদের হাতে সনদ তুলে দেওয়া হয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে সহায়তা করার জন্য সরকারের এটুআই প্রোগ্রাম এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ।
তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রচেষ্টায় তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক যে পাঠ্যক্রম প্রস্তুত করা হয়েছে তা শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই নয় দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সারাদেশের তরুণ-তরুণীদের আইসিটি দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সকল কলেজে আইসিটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করার জন্য সরকারের কাছে সহায়তা চান প্রফেসর আমানুল্লাহ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।