শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫ ১১ শ্রাবণ ১৪৩২
শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
গোপালগঞ্জের ঘটনায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে: আসক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ৫:১১ PM
সাম্প্রতিক সময়ে গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্দেশ করে আক্রমণাত্মক মন্তব্যের কারণেই সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক নির্বিচারে গুলির ঘটনা ঘটেছে। গুলিতে নিহত পাঁচজনের মধ্যে চার জনের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। 

কারফিউ এবং ১৪৪ ধারা চলাকালীন সময়ে নির্বিচারে নাগরিকদের আটক ও গ্রেফতার করার অভিযোগ রয়েছে। ১৮ জন শিশুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এমনকি, আটকের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের মত অভিযোগও উঠেছে। ভয়ে মানুষ নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। নিরপরাধ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জেলার যে সব এলাকায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নেই, সে সব এলাকাতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধর-পাকড়ের অভিযোগ রয়েছে।

গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ এবং গুলিতে পাঁচ নাগরিক নিহত, বহুসংখ্যক আহত এবং পরবর্তী সময়ে গণ আটক, গ্রেফতার বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। শুক্রবার (২৫ জুলাই) আসকের এই পর্যবেক্ষণ গণমাধ্যমের কাছে পাঠানো হয়। 

গোপালগঞ্জে গত ১৬ জুলাই রাজনৈতিক সমাবেশে হামলার ঘটনা নাগরিকের সভা সমাবেশের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে। আসক এসব ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে পর্যবেক্ষণে।

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, গোপালগঞ্জ জেলায় গত ১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্ব নির্ধারিত রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের হামলা চালানোর ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বলপ্রয়োগে এখন পর্যন্ত পাঁচ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন বহু সংখ্যক।

আসক এ ঘটনায় একটি প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধান করেছে। ২১ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত দুদিনব্যাপী চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিন তথ্য সংগ্রহ করে। সরেজমিন তথ্য সংগ্রহকালে নিহত, আহত, আটক বা গ্রেফতার হওয়া নাগরিকদের পরিবার, স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সাধারণ নাগরিক, পেশাজীবী এবং কারাগার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, সমাবেশে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের ভাষ্য অনুযায়ী সমাবেশের দিনে আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সমাবেশস্থলে আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ জন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে সমাবেশের সামনে রাখা চেয়ার ভাঙচুর করতে থাকে। এ সময় সমাবেশে যোগ দেওয়া আনুমানিক ১৫০ থেকে ২০০ জন এনসিপি সমর্থক সমাবেশস্থল ছেড়ে ডিসি অফিসের দিকে চলে যায়। এরপর সমাবেশে যোগ দেওয়া ব্যক্তিরা সংগঠিত হয়ে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় হামলাকারীদের ধাওয়া দিলে তারা ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত সরে যায়। এ ঘটনার পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সমাবেশস্থলের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। 

সমাবেশ সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গোপালগঞ্জ শহরে প্রবেশ মুখে আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকেরা অবস্থান নেওয়ায় পুলিশ এবং সেনা পাহারায় আনুমানিক দুপুর ১টার কিছু পরে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। নেতারা তাদের বক্তব্য শেষ করে মঞ্চ থেকে নেমে গাড়িতে উঠার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকরা শহরের বিভিন্ন স্পটে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এক পর্যায়ে পুরো শহরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল এবং গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে গুলিতে আহত ব্যক্তিদের সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে আহতদের মধ্যে চার জনকে মৃত ঘোষণা করে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে সমাবেশ শুরুর পূর্ববর্তী হামলা এবং সমাবেশের পরবর্তী সময়ের সংঘর্ষের ঘটনায় হামলা কারীদের পক্ষ থেকে তীব্র ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনার কথা জানা গেছে এবং কারো কারো হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল বলে জানা যায়। হামলার সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেও হামলাকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে—এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক নির্বিচারে গুলির ঘটনা ঘটেছে।

আসক মনে করে, গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। এছাড়া ১৬ জুলাই রাজনৈতিক সমাবেশে হামলার ঘটনা নাগরিকের সভা সমাবেশের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে। আসক এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানায়।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত