চব্বিশের জুলাই–আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)।
সোমবার জেনেভা থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সংস্থাটির মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই রায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকারদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। তিনি মন্তব্য করেন যে গত বছরের বিক্ষোভ দমনের সময় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত জাতিসংঘের অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনের পর থেকে তারা বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছেন যে নেতৃত্বের অবস্থানে থাকা ব্যক্তিসহ দোষীদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীদের কার্যকর প্রতিকার, ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি।
ওএইচসিএইচআরের মুখপাত্র আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগে যে কোনো বিচার প্রক্রিয়া অবশ্যই ন্যায়বিচার ও যথাযথ আইনি মানদণ্ড পূরণ করবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যখন অভিযুক্ত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে বিচার পরিচালিত হয় এবং তার ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি জানান, তারা সবসময়ই মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে এবং এ ধরনের দণ্ডাদেশের বিষয়টি দুঃখের সঙ্গে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
রাভিনা শামদাসানি বলেন, মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক আশা প্রকাশ করেছেন যে বাংলাদেশ সত্য উদ্ঘাটন, ক্ষতিপূরণ, ন্যায়বিচার এবং নিরাপত্তা খাত সংস্কারসহ একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে। এই সংস্কার আন্তর্জাতিক মান পূরণ করবে এবং ভবিষ্যতে একই ধরনের অপরাধ বা নির্যাতন ঠেকাতে সহায়ক হবে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশকে সকল ধরনের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতর প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি সকল পক্ষকে শান্ত ও সংযত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় কোনো সহিংসতা বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি না হয়।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে সরকারি দমন-পীড়নে অন্তত ১,৪০০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে।