মঙ্গলবার ১৮ নভেম্বর ২০২৫ ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
মঙ্গলবার ১৮ নভেম্বর ২০২৫
ঘাটাইলে অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সরকারি জমিতে দখলদারিত্ব
ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৮:৪৮ PM

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে বন বিভাগের জমি দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।  উপজেলার ধলাপাড়া রেঞ্জ অফিসের আওতাধীন ঝড়কা, বটতলী, ধলাপাড়া ও সাগরদিঘী বিটে দোকান ও ভবন নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বনবিভাগের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে অবাধে চলছে এই দখলদারিত্ব। এতে একদিকে ধ্বংস হচ্ছে বন, অন্যদিকে পরিবেশ হারাচ্ছে ভারসাম্য। সর্বোপরি জীববৈচিত্র্য পড়ছে হুমকির মুখে।

সূত্র জানায়, উপজেলার ধলাপাড়া রেঞ্জ অফিসের আওতাধীন ৬টি বিট অফিসের অধীনে ২৫ হাজার ৭১৯ একর বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭শ’ একরের বেশি বনভূমি ইতোমধ্যে দখল হয়ে গেছে। অবশিষ্ট জমিতে বিধি অনুযায়ী বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগান স্থাপন করার কথা। কিন্তু সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, অফিসের কাগজের হিসাবের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। একমাত্র দেওপাড়া ও ঝড়কা বিট অফিসের আওতাধীন কিছু বাগান থাকলেও অন্য অফিসের আওতায় বাগান নেই বললেই চলে। 

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেহাত হয়ে গেছে সাগরদিঘী ও ধলাপাড়া সদর বিট অফিসের বাগান। যেখানে কিছু কিছু অংশে ২/৪টি বাগান ছাড়া অবশিষ্টটুকু বেদখল। শুধু সরকারি গাছের পরিবর্তে চারিদিকে ব্যক্তিমালিকানার খামার গড়ে উঠছে। কলা, হলুদ, পেঁপে, আম বাগান ও মিল কারখানা, পাকা বাড়ি ও পোলট্রি ফার্ম। 

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ‘রক্ষকরাই ভক্ষক’, তাদের দাবি- ‘বনের জমি এখন জোর করে দখল করতে হয় না। রেঞ্জ অফিস ও বিট অফিসে টাকা দিলেই মিলে জমি।’

সূত্র জানায়, বনের জমিতে নতুন বাড়ি নির্মাণ করলে অফিস কর্মকর্তাদের দিতে হয় প্রকারভেদে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। আবার সিসি পিলার দিয়ে  ছাদ ঢালাই করলে দিতে হয় দেড় থেকে ২ লাখ টাকা। বন রক্ষকদের যোগসাজশেই বনের এসব জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। 

ঝড়কা বন বিটের আওতাধীন সন্ধানপুর মৌজার নয়ন চালা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বনের ৩৭৫১ দাগে মৃত সাবদুলের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বনের জমি দখল করে বিশাল বাড়ি বানিয়েছেন। সেই বাড়িতে গড়ে তুলেছেন একাধিক ফার্ম। 

এর পাশেই নয়ন চালা গ্রামের সেকান্দর আলীর ছেলে হোসেন আলী বনের জমিতে ফাউন্ডেশন দিয়ে পাকা দালান নির্মাণ করছেন। বনের জমিতে কিভাবে পাকা দালান নির্মাণ করছেন জানতে চাইলে হোসেন আলী ‘এ বিষয়ে আমার কোনো কথা নাই’- বলেই স্থান ত্যাগ করেন।

সাগরদিঘী বন বিটের আওতাধীন পাগারিয়া আমতলা মোড় গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েক মাসে সেখানে বন বিভাগের জমিতে পাশাপাশি ৪টি দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তার পাশেই বনের জমিতে পাগারিয়া বণিক সমিতির নামে লোহার ফ্রেম বসিয়ে বিশাল আকারের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এবিষয়ে সমিতির কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে নির্মাণ শ্রমিক এক যুবক জানান, ‘বনের জমি কিনা আমরা জানি না তবে বণিক সমিতি এ ঘর নির্মাণ করছে।’ 

বনের জমি দখল করে কিভাবে পাকা দালান নির্মাণ করা হচ্ছে সাগরদিঘী বন বিট কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম আনচারীর নিকট জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে অন্য প্রসঙ্গ টেনে না জানার ভান করে পরে কথা বলবেন বলে সংযোগ কেটে দেন। 
 
বনের জমিতে কিভাবে পাকা দালান ও বসত বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে- জানতে চাইলে ঘাটাইল ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাব্বির হোসেন বলেন, ‘এসব ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করতে লিখিত প্রস্তাবের অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ডিসি মহোদয়কে দেওয়া হয়েছে। তাদের নির্দেশনার দিনক্ষণ পেলেই উচ্ছেদ চালানো হবে।’







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত