বুধবার ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বুধবার ১৯ নভেম্বর ২০২৫
সারিয়াকান্দিতে যততত্র বিক্রি হচ্ছে যৌন উত্তেজক ওষুধ
বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:৩২ AM

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যুবক আকন্দ (ছদ্মনাম) সম্প্রতি বিয়ে করেছেন। তার এক বন্ধুর পরামর্শে সপ্তাহে ২ দিন করে বিভিন্ন ধরনের যৌন শক্তিবর্ধক  সিরাপ পান করেন। স্থানীয় বাজারের মুদির দোকান থেকে ৭০ টাকা দামে ক্রয় করেন এসব সিরাপ। 


জানতে চাইলে এই যুবক জানান, এক বন্ধুর মাধ্যমে এ সিরাপের নাম জেনেছেন। এরপর থেকে কিনে খান। এটা না খেলে মনের দিক থেকে ভয় কাজ করে। এখন এটার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পরেছেন। এটা পান করা ছাড়া স্ত্রীর কাছে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। 


এমনকি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে এসব ওষুধ সেবনের ঝুঁকি সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই বলে মন্তব্য করেন এই যুবক। 


তবে চিকিৎসকরা বলছেন, যৌন শক্তিবর্ধকের নামে এসব সিরাপ মানবদেহে নানা মরনব্যাধি সৃষ্টির কারণ হয়ে উঠেছে। ওষুধ প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী ড্রাগ লাইসেন্স ও সাইনবোর্ড ছাড়া ঔষধের ব্যবসা পরিচালনা করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। অথচ সারিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শুধু আকন্দ নামের এই যুবকই নন। পাড়া-মহল্লার কিশোর-যুবক-বয়স্কদের অনেকেই সেবন করছেন ক্ষতিকর এসব সিরাপ। এ ছাড়া সরকারি নীতি নির্দেশনাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েও যত্রতত্র অবাধে বিক্রি হচ্ছে অনুমোদনহীন এসব যৌন উত্তেজক ওষুধ। 


বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন স্ট্যান্ড ও বাজার এলাকার অলিতে-গলিতে পড়ে থাকে এমন ওষুধের খালি বোতল। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এসব যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রি হলেও প্রশাসনের ভূমিকা যেন একেবারেই নীরব। 


সরেজমিনে জানা গেছে, এই সকল ঔষধ বা সিরাপের তালিকায় রয়েছে নানা নামের জিনসিন, হ্যাপি, টার্চ, হর্স, থ্রী-হর্স, এ ওয়ান, ফাইট ওয়ান, এ্যানজয় ফ্রটুস্, ইকলিপ নামীয় তরলীকরণ সিরাপ, ঔষধ মুনইশ, পাওয়ার-৩০, এগ্রা, নিশাত, জিগরাসহ বিভিন্ন বেনামী কোম্পানির পন্য। 


অনুমোদনহীন এই সকল ঔষুধ বা সিরাপের গায়ে বিএসটিআই, মেয়াদ, উৎপাদন তারিখ ও ব্যাচ নম্বর ও খুচরা মূল্য যথারীতি লেখা থাকেও তা নিয়ে বিষ্মিত অনেকেই। এই সকল ঔষুধ শোভা পাচ্ছে উপজেলার পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন ঔষুধের ফার্মেসী, হোমিও, ইউনানি ও আয়ুর্বেদীক দাওয়াখানা, পান-বিড়ির দোকান, মুদি দোকান, হাটবাজারের অস্হায়ী হকারের দোকানগুলোতেও।


এই সকল ঔষুধের বিপরীতে বিভিন্ন ফার্মেসিগুলোতে ঘুরে কথা বলে জানা যায়, যৌনরোগ নিরাময়ে ডাক্তার প্রেসক্রিপশন অনুসারে সাধারনত ভিগোরেক্স, সিলেগ্রা, ডিউমাক্স-৩০, ভায়াগ্রা-৫০, ইনন্টিমেট, বিক্রি হয়ে থাকে। এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী সীমিত পুজি খাটিয়ে এই সকল ঔষধ চুপিসারে উঠতি বয়সি ক্রেতা, প্রাপ্ত বয়স্ক ক্রেতা সহ বিভিন্ন এলাকা হতে আগত খুচরা বিক্রিতাদের নিকট বিক্রি করছেন। 


পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের অল্প পুজিতে অধিক লাভের আশায় তাদের নিযুক্ত ভ্রাম্যমান হকার দিয়ে অন্যান্য বিক্রিত পন্যের সাথে এক সকল উত্তেজক ঔষুধ বা সিরাপ ব্যাগ ভর্তি করের নিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-মফস্বলে বিভিন্ন পান-বিড়ি, মুদি দোকান সহ ভ্যারাইটিস দোকান গুলোয় বিক্রির উদ্দেশ্য।


এদিকে যৌবনের লালসায় কম দামে এসব ঔষধ কিনে একদিকে যেমন প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতা-সাধারণ অপরদিকে কিছু দিন যেতে না যেতেই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে শরনাপন্ন হতে হচ্ছে গ্রাম-মফস্বল বা শহরের কোন যৌন বিশেষজ্ঞের। 


বিশেষজ্ঞদের মতে, যৌন সমস্যায় ভুগছেন এমন অনেকেই চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে নিজে থেকে ওষুধের দোকান বা ফার্মেসি থেকে যৌন উত্তেজক ওষুধ কিনে সেবন করেন। এটি এক সময় অভ্যাসে পরিণত হয়। কিন্তু যারা এভাবে কিনছেন তারা হয়তো জানেনই না প্রকৃত অর্থে তার সমস্যা কী এবং কোথায়। ইরেকটাল ডিসফাংশন যে ব্যক্তির হচ্ছে, তার ক্ষেত্রে এর কারণগুলো প্রথমে শনাক্ত করা জরুরি। কেন এমন হচ্ছে শনাক্ত করে চিকিৎসা করতে হবে, পাশাপাশি স্বল্প সময়ের জন্য ওষুধ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। উত্তেজক ওষুধ আজীবন খেতে হবে বিষয়টা এমন নয়।


যারা এই জাতীয় ওষুধ নিজে থেকে সেবন করেন, তারা ভাবেন ওষুধ ভালো কাজ করছে। সেজন্য সপ্তাহে ২ দিন, ৫ দিন যার যেরকম ইচ্ছে সেভাবেই ওষুধ খেয়ে নেন। কিন্তু দিনের পর দিন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিতভাবে ওষুধ সেবনের কারণে একটা সময় এসব ওষুধ আর কাজে লাগে না, শরীরে রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে। 


একইসঙ্গে যে কারণে যৌন সমস্যা হচ্ছে সেটি শনাক্ত ও চিকিৎসা না হওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত আরও খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয় রোগীকে।

রাত একটু বাড়া মাত্রই উঠতি বয়সি বা প্রাপ্ত বয়স্করা এই সকল সিরাপ বা ঔষধ সরবরাহ বা ক্রয়ে অধিক আগ্রহী হয়ে ওঠে। নগরীর বিভিন্ন ফার্মেসী গুলোর সামনে দাড়িয়ে থাকে দীর্ঘক্ষন। 


অন্যক্রেতারা সরে যাওয়ার মাত্র চুপিসারে ক্রয় করেই তড়িঘড়ি করে চলে যায়। 

তবে প্রতিদিন ক্রয় করা ক্রেতা বিক্রেতার নিকট অনেকটাই পরিচিতি হওয়ায় চেহেরা দেখা মাত্র বিক্রেতা অতি সহজেই দিয়ে দেয় এই উত্তেজক ঔষুধ। নগরীর বিভিন্ন ফার্মেসী সম্মুখ আর পাড়া-মহল্লা ঘুরে অনুসন্ধ্যানে এমনই চিত্র উঠে এসেছে।


হাট শেরপুরের ইনসান বলেন, সারিয়াকান্দি বিভিন্ন হাট-বাজার, পথে-ঘাটে ও ফুটপাতে এমন কি বিড়ি পানের দোকানে দিনদিন বেড়েই চলেছে এসব অবৈধ ওষুধের ব্যবসা। এতে প্রশাসনের কোন ভূমিকা দেখি না। প্রশাসন যদি কোন পদক্ষেপ নিতো তাহলে জীবন রক্ষাকারী নিম্নমানের ওষুধ যত্রতত্র বিক্রি বন্ধ হতো। এসব বন্ধ না করলে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়েই চলবে। বিক্রেতা জাকির জানান গ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে দোকানগুলোতে জিনসিন জাতীয় সিরাপ গুলো ভালো চলে লাভ বেশি তাই, দোকানদারেরা আগ্রহ সহকারে বিক্রি করে।


চর্ম, এলার্জি, যৌন ও কুষ্ঠ রৌগ বিশেষজ্ঞ ডা.কোরবান আলী (রনি) বলেন, পুরুষের ইরেকটাল ডিসফাংশনের জন্য সাধারণত ওষুধ দেওয়া হয়, যা কিছু ব্র্যান্ডের নামে পাওয়া যায়। মূলত এই ওষুধগুলো যৌন উত্তেজক ওষুধ হিসেবে চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে দিয়ে থাকেন। কার জন্য কোন ওষুধ এবং কত ডোজে দেওয়া প্রয়োজন সেটি একজন চিকিৎসক রোগীর সঙ্গে কথা বলে, পরীক্ষা করে নির্ধারণ করেন। 


এসব ওষুধ সেবনে তাৎক্ষনিকভাবে দৈহিক মিলনে স্থায়িত্ব বাড়ালেও শরীরের রক্তচাপ অনেক বেড়ে যায়। ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। একই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনির মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।



আরও সংবাদ   বিষয়:  সারিয়াকান্দি   ঔষুধ  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত