বর্ষার পানি নেমে যেতেই দৃশ্যমান হচ্ছে শিল্প বৈজ্যের বিষাক্ত ছোবলে লাখাইর কৃষি আর প্রকৃতির প্রান সুতাংয়ের ক্ষত। এক সময়ের নির্মল স্বচ্ছ পানির কলকলানির বদলে নোংরা কুচকুচে কালো পানি থেকে ছড়াচ্ছে মারত্মক দুর্ঘন্ধ, আর দুর্ঘন্ধ যুক্ত বিষাক্ত পানির প্রভাবে সুতাংয়ের বুকে মরেপচে ভেসে উঠছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন জাতের মাছ সেই সাথে নদীর পাড়ে বিষাক্রান্ত মাছ খেয়ে মরছে শীতের সময়ে মফস্বলের হাওড়ে আসা শীতকালীন পরিযায়ী পাখি।
সচেতন মহলের মতে, এ পরিস্থিতি নদীর জলজ প্রাণী, উদ্ভিদ ও সামগ্রিক জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন এবং স্থানীয় সাংবাদিকরা নদী রক্ষায় তৎপর হলেও তেমন কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় সুতাং আজও অস্তিত্ব–সংকটে।
তথ্য অনুযায়ী, শিল্পবর্জ্যের কারণে নদীর পানিতে পাওয়া যাচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিকসহ নানা বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান যা মানবদেহে নানান প্রাণঘাতী রোগের কারণ হতে পারে।
উজানে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি সুতাং নদীতে নিঃসরণ হওয়ায় পানি কালো ও দুর্গন্ধময় রূপ ধারণ করেছে। বর্ষা মৌসুমে পানির আধিক্যের কারণে এটি দৃষ্টির আড়ালে থাকলেও পানি নামতেই ভয়াবহতার পুরো চিত্র প্রকাশ পেয়েছে।
মাত্র পনের দিন আগেও নদীর পানি ছিল স্বচ্ছ, দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য; এখন সেখানে শুধু কালো কর্দম, বিষাক্ত গন্ধ আর মৃত মাছ।
পানির অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে অল্প গভীরতার পানির নিচেও কিছু দেখা যায় না। দুর্গন্ধে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকাও কষ্টকর।
বিষাক্ত পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে এবং নদীর পানি জমিতে সেচ দিতে ব্যবহার করায় অনেক কৃষক চুলকানি, ফুসকুড়ি ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সচেতন মহলের আশঙ্কা এ পানির প্রভাবে ফসল উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এছাড়া নদী পার হয়ে হাওরে যেতে গিয়ে বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার গবাদিপশুও ভয়াবহ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, হবিগঞ্জের সায়েস্তাগঞ্জের নিকটবর্তী অলিপুর এলাকার বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানা ইটিপি ছাড়াই বর্জ্য সরাসরি সুতাং নদীতে ফেলছে। এর ফলে নদী দূষিত হয়ে লাখাই ও সদর উপজেলার নুরপুর, রাজিউড়া, কান্দ্রাইল, সানাবাই উচাইল, বেকিটেকা, নাজিরপুর, লুকড়া এবং লাখাই উপজেলার করাব, বুল্লা, বেগুনই, বলাকান্দি, ভুমাপুরসহ বহু গ্রামে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, সুতাং একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। ভারতের ত্রিপুরার পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি হয়ে নদীটি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে লাখাই ও আশপাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিশোরগঞ্জে কালনী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৮২ কিলোমিটার এবং গড় প্রস্থ ৬৩ মিটার।